ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কারের শর্তে বাজেট সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপান। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতেও নিয়েছে। তবে সংস্কার কমিশনগুলো যেসব সুপারিশ ও পরামর্শ দিয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন এখনো শুরু হয়নি। এজন্য প্রতিশ্রুতির পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও বাজেট সহায়তার কোনো অর্থ ছাড় করেনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপান। যদিও গত ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার কথা ছিল এবং আগামী জুনের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ বাজেট সহায়তা হিসেবে পাওয়ার আশা করছে সরকার। সেই আশা কতটুকু বাস্তব হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা স্বৈরসরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই এসব উন্নয়ন সহযোগী অর্থউপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে জরুরি বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এসব সংস্থা ও দেশ। কিন্তু এরপর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে জোর তদবির করেও সে অর্থ ছাড় করা সম্ভব হয়নি। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা হিসেবে জুনের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিতে রাজি হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। তবে, এর জন্য সরকারকে ব্যাংক খাত সংস্কারসহ বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে অন্যতম হলো বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক সংখ্যা ও তাদের কার্যকাল কমানো। এই শর্ত পূরণের পথে এগিয়ে যচ্ছে সরকর। যার অংশ হিসেবে আর্থিক খাত সংস্কারে কমিশনও গঠন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়- ব্যাংক খাত সংস্কার, ব্যাংক খাত শক্তিশালীকরণ, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে তিনটি পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জন্য ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব বোর্ডে জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছিল গত নভেম্বরেই। এরপর চার মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি জানানো হয়নি সরকারকে।
অর্থবিভাগের অপর একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রথম দিকে উন্নয়ন সহযোগীরা যেভাবে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিল ছয় মাস পর তা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেই এসব বিষয়ে নেগুসিয়েশনের ঘাটতিও দেখা দিয়েছে। ফলে প্রতিশ্রুতির অর্থ ছাড় প্রক্রিয়া কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সংখ্যা কমিয়ে আনার একটা সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে বেগবান করতে বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এডিবি ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের দুটি বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছিল যা এখনো পাওয়া যায়নি। বাজেট সহায়তার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে ৩৭৯ মিলিয়ন এবং চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রকল্প সহায়তাও অনুমোদন করে সে সময়। যা সে সময় ছাড়ও করা হয়।