ছয় মাসে (গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর) দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়। গত সেপ্টেম্বরে যা ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা; যা ডিসেম্বর শেষে বিতরণকৃত মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এসব তথ্য জানিয়েছেন। রাজধানীর মতিঝিলে প্রধান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ৬১ তফসিলি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে নেওয়া ঋণ এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, জুলাই-সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা পেতে কোনো সমস্যা হবে না। আমি আগেই বলেছিলাম, খেলাপি বাড়বে, তবে খেলাপি ঋণ এখনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় আমরা সে চেষ্টা করছি। বিভিন্ন আইন কঠোর করার চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে যতই নতুন তথ্য আসছে ততই বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন করতে চাই। যেসব ব্যাংক একীভূত করার দরকার সেগুলো একীভূত করব অথবা নতুন বিনিয়োগকারী নিয়ে এসে পুনর্গঠন করা হবে। তা ছাড়া আইনগত সংস্কার হচ্ছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন রিভিউ হচ্ছে। এসব শেষ হলে ব্যাংক খাত পুনর্গঠন করা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ পয়েন্ট। ২০২৩ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে ২ লাখ কোটি টাকা বেড়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকায়। গত বছর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯২ কোটি টাকা। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি বেড়েছে ৫৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, একদিকে ব্যাংকের নতুন ঋণ বিতরণ/নবায়ন কমেছে, অন্যদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ কতিপয় গ্রাহকের বড় অঙ্কের ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকৃত করেছে। ঋণ শ্রেণিকরণের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশসংক্রান্ত রিট ভ্যাকেট হয়েছে। পুনঃতফসিলকৃত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না হওয়ায় পুনরায় শ্রেণিকৃত হয়েছে।