বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির সমন্বয়কদের উদ্যোগে ‘শিক্ষা, ঐক্য, মুক্তি’ স্লোগান নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)’। তবে আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে নতুন দলের কমিটিতে বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গতকাল বিকাল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের কথা ছিল। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে তা পৌনে ৫টা পর্যন্ত বিলম্বিত হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে ও মধুর ক্যান্টিনের ভিতরে দুটি গ্রুপে নতুন ছাত্র-সংগঠনের নেতৃত্বে আসা বাকের-জাহিদ ও সংগঠনের নামে স্লোগান দেয়। অন্যদিকে মধুর ক্যান্টিনের সামনে আরেকটি গ্রুপ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে নতুন কমিটির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এ সময় তারা ‘ঢাবির সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ঢাবির কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘প্রাইভেটের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘প্রাইভেট ছাড়া কমিটি, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রশিদুল ইসলাম রিফাতকে নিয়েও স্লোগান দেন তারা। তাদের বলতে শোনা যায়, ‘দুঃসময়ের রিফাত ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’, ‘রিফাত ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। একদিকে কমিটি ঘোষণা আটকানোর চেষ্টা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে কমিটি ঘোষণা দিতে তৎপর হন উদ্যোক্তারা। একপর্যায়ে উভয় পক্ষে শুরু হয় উত্তেজনা। দুই পক্ষের হাতাহাতির মধ্যেই আবু বাকের মজুমদার ঘোষণা দেন নতুন দলের। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত তিনজন আহত হয়।
বিকাল সোয়া ৫টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে প্রস্থান করে উভয় পক্ষের লোকজন। তবে মধুর ক্যান্টিনের আশপাশেও বিশৃঙ্খলভাবে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সোয়া ৬টা) ক্যাম্পাসের হল পাড়া ও মধুর ক্যান্টিনের পাশে অবস্থান নিতে দেখা যায় উভয় পক্ষের লোকজনকে। নতুন ছাত্র-সংগঠনের একাধিক উদ্যোক্তা জানান, মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রশীদুল ইসলাম রিফাত (রিফাত রশিদ) এর শীর্ষ পদে আসা নিয়ে বিভক্তির সূত্রপাত। রিফাত রশিদ শীর্ষ চার পদের একটিতে আসতে চান। কিন্তু সংগঠনের নারী সদস্যদের বিরোধিতার কারণে তাকে শীর্ষপদ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে রিফাত রশিদের অনুসারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তরার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভরত অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম-আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে ঢাকা কলজের ইন্টারমেডিয়েট শিক্ষার্থী নাহিদ হক বলেন, আমি রিফাত রশিদ ভাইয়ের জন্য আসছি। যখন ৬ সমন্বয়ক ডিবি হেফাজতে তখন কোটি টাকার প্রলোভনের মুখেও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এখন রিফাত রশিদকে মাইনাস করা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে জানতে রশিদুল ইসলাম রিফাত (রিফাত রশিদ)-কে একাধিকবার ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নতুন দলের নেতৃত্বে আছেন যারা : সংগঠনটির কেন্দ্রে আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমম্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। কেন্দ্রের সদস্যসচিব পদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দপ্তর সেলের সম্পাদক জাহিদ আহসান, সংগঠনটির মুখ্য সংগঠক পদে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরী, সংগঠনটির মুখপাত্র হিসেবে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আশরেফা খাতুন।
এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আছেন তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে সমন্বয়ক রশিদুল ইসলাম রিফাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক পদে আছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে লিমন মাহমুদ হাসান, সিনিয়র সদস্যসচিব হিসেবে আল-আমিন সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব পদে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুহির আলম। এ ছাড়া মুখ্য সংগঠক পদে সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হিসেবে আছেন সাবেক সমন্বয়ক রাফিয়া রেহনুমা হৃদি।