ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি উদ্বেগজনক হারে কমেছে। খুবই অ্যালার্মিং সিচুয়েশন, প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গত ডিসেম্বর শেষে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এ সময় তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নিত্যপণ্যের ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি বিলাসবহুল পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
গতকাল বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নিজস্ব অডিটোরিয়ামে ডিসিসিআই আয়োজিত এ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এ শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, স্মুথ অপারেশন নিশ্চিত করার জন্য শিল্পের সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি প্রয়োজন। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ, উৎপাদন, ব্যবসা পরিচালনা এবং স্মুথ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণ, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনয়ন এবং ঋণের সুদ হার হ্রাস একান্ত অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া শেষের দুই মাস মূল্যস্ফীতি কমলেও বাজারে তার ছাপ দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আবদুর রহিম খান বলেন, আমাদের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আহরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ হিসাব মেলাতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব ও অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে বিগত দিনগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিলক্ষিত হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়ার কারণে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আগামী অর্থবছরে গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন করা হলে বিদ্যমান সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) সায়েরা ইউনুস বলেন, বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আমাদের পণ্য আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি হার সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটা মোকাবিলার চেষ্টা করেছে, তবে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমাদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কাক্সিক্ষত মাত্রায় হ্রাস পায়নি। ২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে এবং আগামী বছর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ডাবল ডিজিটে উন্নীত হবে।