গত মঙ্গলবারের ঘটনার জেরে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ওইদিন শিক্ষার্থীদের ওপর প্রায় চার ঘণ্টা ধরে হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। তাদের বক্তব্য, ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদের দায়িত্বহীনতার কারণেই ছাত্রদলের হামলায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাই ভিসি ও প্রো-ভিসিকে বর্জন করে নতুন ভিসি নিয়োগের দাবি তাদের। তবে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগের আহ্বান প্রত্যাখান করেছেন ভিসি। জানা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের মধ্যকার সংঘর্ষ ঘিরে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তারা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দুর্বার বাংলা’র পাদদেশে অবস্থান নিয়ে ‘ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা এ কুয়েটে হবে না’, ‘শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরে প্রশাসন তামাশা করে’ লেখা পোস্টার বহন করে। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও দুর্বৃত্তদের উদ্দেশে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ আন্দোলন এখন ভিসিবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে যখন আন্দোলন শুরু হয় তখন তা ভিসিবিরোধী ছিল না। কিন্তু দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা ধরে যখন শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তখন সেটা ভিসিবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। ছাত্রদলের সঙ্গে মিশে যারা হামলা চালিয়েছে তারা এর আগেও বারবার ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। বিষয়টি ভিসিকে জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি। ঘটনার দিন দেড়টার দিকে পুলিশ, সেনাবাহিনীকে ফোন দেওয়ার জন্য ভিসিকে বলা হলেও তিনি আড়াইটার দিকে ফোন দেন। অর্থাৎ ৩টার পর আর কেউ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
এ অবস্থায় দায় নিয়ে শিক্ষার্থীরা পদত্যাগের আহ্বান জানালে ভিসি দায় নিতে রাজি হননি। এদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে খানজাহান আলী থানায় মামলা হয়েছে। হামলার ঘটনায় গঠিত চার সদস্যের কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. এম এম এ হাসেম বলেন, বুধবার থেকেই তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। অনেক তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য একটা জায়গা দরকার। অফিস ভবনগুলো তালাবদ্ধ থাকায় তদন্তকাজ এগিয়ে নিতে পারছি না। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ, জড়িত বহিরাগতের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ। উল্লেখ্য, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঘিরে গত মঙ্গলবার সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী। পরদিন কুয়েট সিন্ডিকেটের বিশেষ জরুরি সভায় ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ রাখাসহ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।