বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা অর্জুন কাপুরকে আজ যে সুঠাম দেহের অধিকারী হিসেবে দেখি, একসময় তিনি মোটেও এমন ছিলেন না। বলিউডে অভিষেকের আগে ১৪০ কেজি ওজনের এক তরুণ ছিলেন তিনি! কিন্তু কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় দিয়ে তিনি ৫০ কেজি ওজন কমিয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে দেন। ২০১২ সালে 'ইশাকজাদে' সিনেমায় পরিনীতি চোপড়ার বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। তার এই পরিবর্তন ছিল সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক।
অর্জুন কাপুরের এই ওজন কমানোর যাত্রা ছিল দীর্ঘ এবং কঠিন। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, ফিটনেস লক্ষ্যে পৌঁছাতে তার প্রায় ১৫ মাস সময় লেগেছিল। একটি মুছে ফেলা ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তিনি নিজেই এই তথ্য শেয়ার করেছিলেন। এই যাত্রায় হাঁটা তার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
হাঁটা
টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্জুন কাপুর জানান, ওজন কমানোর জন্য তিনি হাঁটার ওপর ভীষণভাবে নির্ভর করেন। তিনি বলেন, যখন আমি ছোটবেলায় মোটা ছিলাম, তখনও আমি একটি কথা বিশ্বাস করতাম, হাঁটার চেয়ে ভালো কিছু নেই। আজও যখন আমি ওজন কমাতে চাই, তখন শুধু বাইরে গিয়ে হাঁটার কথা মনে রাখি। শুধু শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন। আপনি বসে বসে খাবার খেতে পারেন না এবং তারপর ওজন না কমার জন্য অভিযোগ করতে পারেন না। তার এই কথাগুলো থেকে স্পষ্ট যে, নিয়মিত হাঁটাচলা তার ফিটনেস রুটিনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তথ্য অনুযায়ী, অর্জুন কাপুর নিজেকে একজন ভোজনরসিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, জাঙ্ক ফুড এবং অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করে নিজেকে সুস্থ ও ফিট রেখেছেন। তিনি উচ্চ-কার্বোহাইড্রেট এবং চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলেন এবং এর পরিবর্তে তাজা ফল, শাকসবজি এবং উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন।
অর্জুন কাপুরের স্বাস্থ্যকর রুটিন
৪০ বছর বয়সী এই অভিনেতার প্রতিদিনের রুটিনও ছিল বেশ নিয়মতান্ত্রিক, যা তিনি একটি ডিলিট হয়ে যাওয়া ইনস্টাগ্রাম পোস্টে শেয়ার করেছিলেন বলে জানা যায়।
সকালের নাস্তা: অর্জুন কাপুর সাধারণত সকালের নাস্তায় ডিমের মতো উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাবার খান, এরপর তিনি জিমে যান।
দুপুরের খাবার: দুপুর ১:৩০ টার দিকে তার দুপুরের খাবার থাকে, যা বেশিরভাগ সময় একটি গ্রিক সাউভলাকি র্যাপ নিয়ে গঠিত। এরপর তিনি বিকেল ৫টা পর্যন্ত মিটিং এবং কাজের ফোন কলগুলো সামলান।
সন্ধ্যার নাস্তা: সন্ধ্যায় অর্জুন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ তুর্কি সুশি উপভোগ করেন। এরপর তিনি আবার জিমে যান।
রাতের খাবার: রাতের খাবারে অর্জুন কাপুরের পছন্দ তুর্কি কাবাব, সাথে থাকে মুহম্মারা সস, পুদিনা চাটনি এবং আচারযুক্ত সবজি।
তার ওয়ার্কআউট রুটিনে ওজন প্রশিক্ষণ, সার্কিট প্রশিক্ষণ, ক্রসফিট প্রশিক্ষণ এবং কার্ডিও ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সমন্বিত পদ্ধতি তাকে ফিট থাকতে সাহায্য করেছে।
রোগের সাথে লড়াই এবং মানসিক স্বাস্থ্য
২০২৪ সালে অর্জুন কাপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান যে, তিনি হ্যাশিমোটোর থাইরয়েডাইটিস নামক একটি অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত। এই অবস্থা বিপাক ক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে এবং ওজন বাড়াতে পারে। দ্য হলিউড রিপোর্টার ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি হালকা বিষণ্ণতার জন্য থেরাপি নেওয়ার কথাও জানান।
তিনি বলেন, আমি সবসময় এটি নিয়ে কথা বলিনি, তবে আমার হ্যাশিমোটোর রোগও আছে (অটোইমিউন রোগ যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে), যা থাইরয়েডেরই একটি বর্ধিত রূপ। এটা প্রায় এমন যে আমি একটি ফ্লাইট নিয়েও ওজন বাড়াতে পারি কারণ শরীর বিপর্যয়ে চলে যায়... আপনার শরীর 'ফাইট-অর-ফ্লাইট' মোডে থাকে।
তিনি আরও যোগ করেন, আমার ৩০ বছর বয়সে এটি (হ্যাশিমোটোর রোগ) হয়েছিল এবং আমি এটিকে অস্বীকার করেছিলাম এবং বলেছিলাম, 'না, এটা হতে পারে না'। আমার মা (মোনা শুরি কাপুর) এর এটি ছিল, এবং আমার বোন (অংশুলা কাপুর) এরও এটি আছে... আজ যদি আমি ফিরে তাকাই, তাহলে আমার ছবিগুলোর মাধ্যমে আমার শরীর পরিবর্তন হতে দেখতে পাই। এখন এটা ২০১৫-১৬, অর্থাৎ সাত-আট বছর ধরে আমি সেই শারীরিক আঘাত বয়ে বেড়াচ্ছি এবং একই সাথে আমার চলচ্চিত্রগুলোও ঠিকঠাক চলছে না।"
৫০ কেজি'র বেশি ওজন কমালেও অর্জুন কাপুরের ওজন কমানোর এই রূপান্তর এখনও চলমান। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার ওজন কমানোর যাত্রা একটি ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল