দেড় শ বছরের বগুড়া পৌরসভায় এখনো গড়ে ওঠেনি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলায় দূষণ ও দুর্গন্ধে নাকাল শহরবাসী। হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য। নানা রোগ-বালাইয়ে ভুগছেন বাসিন্দারা।
১৮৭৬ সালে বগুড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮১ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বগুড়া পৌরসভায় প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসতি। এই পরিমাণ জনবসতি থেকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩৫০ টন ময়লা-আবর্জনা জমা হয় জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। কাগজে কলমে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বর্জ্য সংগ্রহে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বনানী রেশম উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন স্থান, ঠনঠনিয়া, সেউজগাড়ি কৃষি অফিস, রেলস্টেশন, আটাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে ও ফুলবাড়ী শিল্পকলা একাডেমির সামনসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ময়লার স্তূপ হয়। অনেক এলাকার আবর্জনা সরাসরি শহরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীতে পড়ছে। ট্রান্সফার স্টেশনগুলোর কয়েকটিতে শেড থাকলেও সেগুলো উন্মুক্ত। ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিনে সিবিও শ্রমিকরা আবর্জনা নিয়ে এসে ফেলছেন স্টেশনের সামনে। এগুলো বেশির ভাগ রাস্তার ওপর পড়ে। কাক, কুকুর, গবাদি পশু ও কিছু ছিন্নমূল মানুষ এসব আবর্জনা ঘাটাঘাটি করে রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়। পুরো ট্রান্সফার স্টেশন এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আশপাশের বাসিন্দারা ছাড়া পথচারীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়। সিবিওদের দেখভাল করা পৌরসভার কনজারভেন্সি শাখা সূত্র জানায়, বগুড়া পৌরসভায় প্রায় ১৫২টি সিবিও আছে। গার্বেজ ট্রাক আছে ২০টি। এর মধ্যে তিনটি পৌরসভার নিজস্ব, বাকি ১৭টি ট্রাক ভাড়া করা। শহরের আবর্জনা রাখার ট্রান্সফার স্টেশনের মধ্যে স্থায়ী নয়টি ও অস্থায়ী সাতটি। ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন দুটি। দুটিই বন্ধ। বগুড়া শহরের বিসিক এলাকার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সামনের সড়কের অর্ধেক অংশজুড়েই ভাগাড়। পৌরসভার ময়লা-আবর্জনার কারণে এ পথে হাঁটাও দুর্বিষহ। উৎকট গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম হয়। নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না। এই স্থান থেকে ময়লার স্তূপ সরিয়ে নিতে পৌরসভা বরাবর অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। পৌর প্রশাসক মাসুম আলী বেগ জানান, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ও মিউনিসিপ্যাল সাপোর্ট ইউনিটের আওতায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপনের চেষ্টা চলছে। শহরের আবর্জনা প্রতিদিনই অপসারণ করে অস্থায়ী ভাগাড়ে ফেলা হয়। এরপরও কিছু থেকেই যায়। এ সসম্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করা হচ্ছে।