১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় ‘মানুষের মন’। এটি স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র। আর এর পরিচালক ছিলেন মোস্তফা মেহমুদ। ষাটের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি প্রয়াত জহির রায়হানের হাত ধরে ‘বেহুলা’ ছায়াছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ষাট, সত্তর ও আশির দশকে তাঁর পরিচালিত ১৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি মুক্তি পায়। সর্বশেষ ১৯৮২ সালে মেহমুদ পরিচালিত ‘স্বামীর সোহাগ’ ছায়াছবি মুক্তি পাওয়ার পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। চলচ্চিত্রকে বিদায় জানিয়ে তিনি চলে আসেন নিজ জন্মস্থান চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠানালা গ্রামে। ১৯৯৮ সালে এখানেই তিনি গড়ে তোলেন খামার। সাড়ে ৬ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এ খামারের নাম দেন ‘মিরসরাই এগ্রো কমপ্লেক্স’। এরপর একজন সফল খামারি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৩৬ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন পরিচালক মোস্তফা মেহমুদ। ১৯৫৭ সালে ‘মৃদঙ্গ’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন তিনি। লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৬৬ সালে জহির রায়হানের আগ্রহে ‘বেহুলা’ ছায়াছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে জহির রায়হানের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ১৯৬৮ সালে মিতা ফিল্মসের ব্যানারে মোস্তফা মেহমুদ পরিচালিত প্রথম ছবি ‘মোমের আলো’ মুক্তি পায়। তিনি পাকিস্তান আমলে ৬টি এবং স্বাধীনতার পর ৯টি ছবি পরিচালনা করেন। মোস্তফা মেহমুদ পরিচালিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ছায়াছবি ‘মানুষের মন’। এতে অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক, ববিতা, আনোয়ার হোসেন, রোজী সামাদ, হাসমত প্রমুখ।
তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- মায়ার সংসার, অবাক পৃথিবী, জয়-পরাজয়, মধুমিতা, মাটির মানুষ, মণিহার প্রভৃতি। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি হারিয়েছেন সহধর্মিণীকে। এক ছেলে থাকেন কানাডায়, আরেকজন আমেরিকায়, ছেলেদের ডাকে প্রবাসে গেলেও তিনি মাটির টানকে অস্বীকার করতে পারেন না। ছুটে আসেন জন্মভূমি মায়ের কোলে। দেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চান প্রখ্যাত এই চলচ্চিত্র পরিচালক। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় বাবা ইঞ্জিনিয়ার দিল মেহমুদকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা মেহমুদ।