প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী অনিমা রায়। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে রবীন্দ্রসংগীত ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে বলা কথা তুলে ধরা হলো-
সম্প্রতি নিউইয়র্কে আপনার একক সংগীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হলো। অনুভূতি কেমন?
হ্যাঁ, ৩ মে সন্ধ্যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ’র আশা পার্টি হলে এ আয়োজনটি সম্পন্ন হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আমি ২১টি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করি।
শুধু গান নয়, প্রতিটি গানের পেছনের গল্প ও রবীন্দ্রনাথের ভাবনার দিকগুলোও তুলে ধরি। রবীন্দ্রনাথের গান শুধু সুর নয়, একেকটি গান যেন একেকটি দর্শন। কোনোটি প্রকৃতিকে নিয়ে, কোনোটি ভালোবাসা বা ঈশ্বরকে ঘিরে, আবার কোনো গান সমাজ ও রাজনীতির দিকনির্দেশ করে। ‘আমরা সবাই রাজা’ গানটির মধ্যেও কবি বিশ্বরাজনীতির গভীর দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। আমার কথায় ও সুরে দর্শকরা যেন রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে উপলব্ধি করল। এটা অসাধারণ অনুভূতি আমার জন্য।
রবীন্দ্রনাথকে কতটা লালন করেন?
আমার অস্তিত্বজুড়ে রবীন্দ্রনাথ। তিনি আমার বন্ধুর মতো। ঈশ্বরকে পাওয়া কঠিন। কিন্তু বন্ধুকে পাওয়া সহজ। যাকে সব সময় পাওয়া যায়, মনের ভাব হয়। সব সময় তাঁর সঙ্গে মনের কথা আদানপ্রদান হয়। আমার সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না, পাওয়া-না পাওয়া সবকিছু রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে। আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস তাঁকে নিয়ে। সত্যি বলতে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বুকে রবীন্দ্রনাথকে, রবীন্দ্রসংগীতকে ধারণ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।
জীবনটা সাজিয়েছি রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে। নিজের বাড়িটির নামও দিয়েছি ‘পুনশ্চ’। যেটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গদ্য ছন্দে লেখা কাব্যগ্রন্থ। চারদিকে অনেক মোহ ছড়িয়ে থাকলেও রবীন্দ্রনাথের দিকে নিজেকে ধাবিত করা অনেক প্রশান্তির।
তরুণ প্রজন্মের মাঝে রবীন্দ্রসংগীত কেমন প্রভাব ফেলছে?
রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও শিক্ষক হিসেবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভালো আগ্রহ দেখছি। শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত আমাকে মুগ্ধ করে। ওরা যে রবীন্দ্রনাথকে ভালোবেসে হৃদয়ের গভীর থেকে সুর তোলে সেটি আমি উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু শিল্পী বা শিক্ষার্থীর বাইরে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে ভয় কাজ করছে তরুণদের। এ গান কণ্ঠে তুলতে গিয়ে কোথাও ভুল হয় এই ভেবে গাওয়া থেকে দূরে থাকছে। রবীন্দ্রসংগীত চর্চায় সুন্দর পরিবেশের অভাব রয়েছে। রবীন্দ্র মঞ্চ নামে কোথাও কিছু নেই। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তরুণরা রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আরও আগ্রহী হতো।
সাহিত্য-সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রচর্চা কমে যাচ্ছে বলে কি মনে করেন?
এখন সাহিত্য-সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রচর্চা খুব কম হয়। এটা আমাদের দৈন্যতা। অথচ রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ সবকিছু প্রাসঙ্গিক, সমসাময়িক। সর্বত্র এর সঠিক চর্চা হলে সমাজও সুন্দর হতো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সেটি হচ্ছে না। পরিবারে বাবা-মাকে আজকাল ছেলেমেয়েরা রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়তে দেখে না। পরিবারের দায়িত্বশীলরা ছোটদের রবীন্দ্রনাথের প্রতি আগ্রহ করছে না। সবাই কেমন যেন উদাসীন।
সাহিত্য-সংস্কৃতিতে রবীন্দ্র চর্চা কমায় আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন?
এখন সাহিত্য-সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রচর্চা খুব কম হচ্ছে। এটা আমাদের দৈন্যতা। অথচ রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ সবকিছু কত প্রাসঙ্গিক, কত সমসাময়িক। সর্বত্র এর সঠিক চর্চা হলে আমাদের সমাজটাও সুন্দর হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটি হচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়তে দেখে না। এছাড়া পরিবারের দায়িত্বশীলরাও ছোটদের রবীন্দ্রনাথের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে না। সবাই কেমন যেন উদাসীন হয়ে গেছে।