ঘরোয়া বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ছোটপর্দা বা টেলিভিশন। ঈদ এলে টিভি চ্যানেলগুলো বর্ণাঢ্য যত অনুষ্ঠানমালা নিয়ে দর্শক মনোরঞ্জনে এগিয়ে আসে। প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদেও ছিল চ্যানেলে চ্যানেলে নানা ঈদ আয়োজন। তবে এবারের আয়োজন দর্শকদের কতটা মুগ্ধ করতে পেরেছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সেই মতামত তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে
আবুল হায়াত, অভিনেতা, নাট্যনির্মাতা
প্রতিবারের মতো এবারও টিভি চ্যানেলগুলো নাটক, গান, সিনেমা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এর মধ্যে কিছু ভালো কিছু মোটামুটি হয়েছে। তবে আমার মতে ভালোর সংখ্যাটিই বেশি ছিল। বিশেষ করে নাটকের ক্ষেত্রে। এটি দর্শক ও টিভি চ্যানেল, উভয়ের ক্ষেত্রে একটি পজিটিভ দিক। পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও প্রচুর ভালো নাটক প্রচার হয়েছে। যা ট্রেন্ডিংয়ে স্থান করে নিয়েছে। তাই আমি বলব টিভি চ্যানেলের ঈদ অনুষ্ঠান এবার আগের চেয়ে উন্নত ছিল। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, বর্তমান সময়ের টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মান সত্তর থেকে নব্বই দশকের অনুষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সববিছুই বদলে যায়।
মনোযোগের অভাব ছিল
মামুনুর রশীদ, অভিনেতা, নাট্যনির্মাতা
এবারের ঈদে টিভি অনুষ্ঠানগুলো সেভাবে আমার দেখা হয়নি আর অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো সুনামও শুনিনি। আসলে সেই সত্তর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত শুধু ঈদ নয়, স্বাভাবিক সময়েও টিভি অনুষ্ঠানগুলো যেভাবে দর্শক মন কাড়ত তা এখন আর হয় না। এর জন্য দায়ী মনোযোগ ও কমিটমেন্টের অভাব। একই সঙ্গে তুখোড় শিল্পী, নির্মাতা ও বাজেটের অভাব তো যোগ হয়েছেই। এসব অভাব মিলিয়ে টিভি অনুষ্ঠান এখন আর আগের মতো দর্শক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। এর ভিতরেও মাঝেমধ্যে কিছু নাটক ও অনুষ্ঠান দর্শক নজর কাড়ছে। এটিই এখন একমাত্র সন্তুষ্টি।
প্ল্যানিংয়ের অভাব রয়েছে
খুরশিদ আলম, কণ্ঠশিল্পী
বর্তমান সময়ে ছোটপর্দায় ঈদ অনুষ্ঠান নিয়ে যে সমস্যাটি প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো টাইমিং ও প্ল্যানিংয়ের অভাব। সেটি সরকারি টিভি চ্যানেল বিটিভি হোক কিংবা প্রাইভেট চ্যানেল, সব ক্ষেত্রেই তা পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন একজন সিনিয়র শিল্পীর অনুষ্ঠানের শিডিউল ফেলা হয় বিকাল ৫টায়, মানে অফ পিক আওয়ারে। তখন সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই অনুষ্ঠানটি ইচ্ছে থাকলেও সবার পক্ষে দেখার সুযোগ হয় না। আবার জনপ্রিয় অনেক নতুন শিল্পীর অনুষ্ঠান প্রচারের সময় দেওয়া হয় গভীর রাতে। তখনো কী সবাই তা দেখতে পারে। এবারের ঈদে ছোটপর্দায় প্রচুর গান, নাটক, সিনেমাসহ নানা ভালো অনুষ্ঠান প্রচার হয়েছে। কিন্তু টাইমিং ও প্ল্যানিংয়ের অভাবে দর্শক তা উপভোগ করতে পারেনি। তাই টিভি চ্যানেলগুলোর উচিত সঠিক সময়ে সঠিক অনুষ্ঠান প্রচার করা।
ভালোমন্দ মিলিয়েই চলেছে
গিয়াসউদ্দীন সেলিম, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
এবারের ঈদে বলতে গেলে ভালোমন্দ মিলিয়েই অনুষ্ঠান প্রচার হয়েছে। কারণ এখন নাটক বা যে কোনো অনুষ্ঠানের নির্মাণ বাজেট অনেক বেড়ে গেছে। সেদিক থেকে টিভি চ্যানেল থেকে সেই পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায় না। তাই কোয়ালিটি প্রোগ্রাম আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এখন ইউটিউব, ওটিটিসহ নানান দেখার মাধ্যম বেড়েছে। তাই দর্শক তার পছন্দের অনুষ্ঠান যে মাধ্যমে হচ্ছে তাতে দেখে নিতে পারছে।
এভাবেই এখন ভালো অনুষ্ঠান ব্যালান্স করে দেখতে হচ্ছে দর্শকদের। ঈদেও তাই।
অনুষ্ঠান ভালো হয়েছে
কাজী হায়াৎ, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
আমার যতটুকু অবজারভেশন তাতে মনে হয়েছে এবার ছোটপর্দার ঈদ আয়োজন ভালো হয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলো এবার প্রচুর সিনেমা প্রদর্শন করেছে, এর মধ্যে নতুন সিনেমাও ছিল। সিনেমা হচ্ছে বিনোদনের প্রধান খোরাক। তাই ভালো ভালো সিনেমা দেখিয়ে টিভি চ্যানেলগুলো ঈদে দর্শক ধরে রাখতে পেরেছে।
ঈদের নাটকগুলোও দর্শক নজর কেড়েছে। যেমন আমার স্ত্রী একটি নাটক দেখে এর বেশ প্রশংসা করেছেন। চ্যানেল আইতে ‘ছোটকাকু’ দর্শক বেশ পছন্দ করেছে।
আমি বলব টিভি চ্যানেলগুলো এখন বিনোদনের দিকে যেভাবে ঝুঁকছে তা প্রশংসার দাবিদার। কারণ এতে নতুন শিল্পী তৈরি হচ্ছে এবং শিল্পীরা জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। টিভি চ্যানেল বেশি হয়ে যাওয়াতে হয়তো একটি চ্যানেলের পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে দর্শক আরেকটি চ্যানেলের ভালো অনুষ্ঠান মিস করছে। তবে ঈদে দর্শক বিনোদনের অপরিহার্য মাধ্যম এখনো টেলিভিশন।