এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি শেফালি জরিওয়ালার মৃত্যু নিয়ে। ৪২ বছরের বলিউড তারকার আকস্মিক মৃত্যুতে চমকে গিয়েছেন অনেকেই। ঘটনা জানাজানি হতেই নানাবিধ রোগ, অসুখ, স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে ক্রমাগত কথা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তার পর শোনা যায়, বার্ধক্য ঠেকানোর ‘ট্রিটমেন্ট’ও করেছিলেন তিনি। তাই এক দিকে ৪০-এর পর হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে এবং ‘অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট’ নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। তবে সম্প্রতি ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, আকস্মিক রক্তচাপ নেমে যাওয়ার ফলেও মৃত্যু হতে পারে নায়িকার।
প্রাথমিক ভাবে ময়নাতদন্তে যা জানা গিয়েছে, হঠাৎ করে রক্তচাপ অনেকখানি নেমে যাওয়ার ফলেই সম্ভবত হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তার পরই তাঁর স্বামী পরাগ ত্যাগী হাসপাতালে নিয়ে যান শেফালিকে। যেখানে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় অভিনেত্রীকে। কিন্তু কেন হঠাৎ রক্তচাপ নেমে যায় শেফালির? জানা যায়, গত শুক্রবার শেফালির বাড়িতে সত্যনারায়ণের পুজা চলছিল। সে কারণে উপবাসে ছিলেন অভিনেত্রী। রাতের দিকে দিনের প্রথম খাবার খান তিনি। তখনই সকলের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সূত্রের খবর, সে দিনই সন্ধ্যায় অ্যান্টি-এজিং-এর ইঞ্জেকশন নিয়েছিলেন। যে ট্রিটমেন্টটি তিনি করাচ্ছিলেন, তা নাকি ভিটামিন সি আর গ্লুটাথায়োন নির্ভর। ত্বকের রং হালকা করা এবং দূষিত পদার্থ বার করে ত্বককে ডিটক্সিফাই করার জন্য প্রয়োজনীয় এই গ্লুটাথেয়োন।
চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, গ্লুটাথায়োন নিলে রক্তচাপ কমানোয় সাহায্য হয় তাঁদের। কিন্তু এমন কোনও ঘটনার কথা শোনা যায় না যে এই ওষুধ নেওয়ার পর এত পরিমাণ রক্তচাপ কমে গিয়েছে যে মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে এক দিনের উপবাসের ফলে এতটাও রক্তচাপ কমে যায় না যে কার প্রাণহানি হতে পারে। তবে গ্লুটাথায়োনের ফল মারাত্মক অ্যালার্জি থেকে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। শরীরে র্যাশ থেকে স্টিভেনস-জনসন সিন্ড্রোম (ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) পর্যন্ত হতে পারে। তা ছাড়া কিডনির সমস্যা, পেটব্যথা, বমিভাবও দেখা দেয় এই ওষুধর ফলে। আর সে কারণে রক্তচাপ নেমে যেতে পারে। উপরন্তু তিনি যদি ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তা হলে উপবাস মারাত্মক হয়ে যেতে পারে।
শেফালি ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন কি না, তা জানা যায়নি। কিন্তু চিকিৎসকের কথায় বোঝা যাচ্ছে, উপবাস করলে খানিক পরিমাণ রক্তচাপ নেমে যেতে পারে। তার উপর শেফালি গ্লুটাথায়োন নিয়েছিলেন ও দিনই। সে কারণে রক্তচাপ নেমে যাওয়ার কথা। সম্ভবত সব কারণ মিলেমিশেই ঝপ করে অনেকটা রক্তচাপ নেমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয় শেফালির।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মুম্বাই পুলিশ ১০টি বয়ান রেকর্ড করেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ খাওয়ার ফলে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে পাশাপাশি, খাবারে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি তদন্তকারীরা। বিস্তারিত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ, নিজে নিজে ওষুধ খাওয়ার ফলে যে কী মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, তা অনেকেই জানেন না। ফলে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই, চিকিৎসকের পরামর্শ না করেই ওষুধ খেয়ে নেন নিজের মতো। তার উপর গায়ের রং ফর্সা করা, বার্ধক্য রোধ করা, বোটক্স করানো— এ ধরনের চিকিৎসায় এর আগেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা না বলে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। উপরন্তু, কোমর্বিডিটি থাকলে উপবাস করা উচিত নয় কখনওই। আর উপোস করার দিনে কী কী ওষুধ খাওয়া উচিত, কী নয়, তা-ও জেনে নিতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল