‘চাচা, বাড়িঘর এত সাজানো কেন? চাচা, হেনা কোথায়?’ এ সংলাপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে এতটাই ঝড় তুলেছে যে, এখন সবার মুখে মুখে এই ‘চাচা, হেনা কোথায়?’ এতে সবার মতো ছবির অভিনয়শিল্পী শাবনাজ, বাপ্পারাজ ও শাবনাজের স্বামী অভিনেতা নাঈমও রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ছবি মুক্তির ২৯ বছর পরও এর একটি সংলাপ এভাবে মুখে মুখে চর্চিত হবে আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউর বন্যা বয়ে যাবে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
১৯৯৬ সালের ২৬ জুলাই মুক্তি পায় ইফতেখার জাহান পরিচালিত ‘প্রেমের সমাধি’ ছবিটি। এর কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। ছবির একপর্যায়ে নায়ক বকুল (বাপ্পারাজ) দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে তাঁর প্রেমিকা হেনার (শাবনাজ) বাড়ি সাজানো দেখতে পান। তিনি হেনার বাবাকে (আনোয়ার হোসেন) জিজ্ঞেস করেন, ‘চাচা, বাড়িঘর এত সাজানো কেন? চাচা, হেনা কোথায়?’ জবাবে চাচা বলেন, ‘হেনাকে তুমি ভুলে যাও, হেনার বিয়ে হয়ে গেছে।’ বকুল তখন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘না না, হেনার বিয়ে হতে পারে না। এ আমি বিশ্বাস করি না।’ এরপর ‘প্রেমের সমাধি ভেঙে, মনের শিকল ছিঁড়ে, পাখি যায় উড়ে যায়’ গানটি বাজতে থাকে। এ প্রসঙ্গে বকুলরূপী বাপ্পারাজের মন্তব্য হলো-
‘অনেকেই এই দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করছেন এবং নিজেদের মতামত ও অনুভূতি প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন পেজ, গ্রুপে বানানো হচ্ছে মিমস। মানুষের কমেন্ট বক্সেও অহরহ দেখা যাচ্ছে এই মিমস। তবে ঠিক কী কারণে এ সংলাপটি হঠাৎ করে ভাইরাল হলো, তা স্পষ্ট নয়। তবে বিষয়টি খুব ভালো লাগার, কারণ দীর্ঘ ২৯ বছর পর একটি ছবির একটি সংলাপ এভাবে ভাইরাল হবে যা কল্পনাও করা যায় না।’ অবশেষে সেই ‘হেনা’কে খুঁজে পেলেন বাপ্পারাজ। টাঙ্গাইলে দেখা হলো দুজনের। অভিনেতা নাঈম তাঁর নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলের সাহেব বাড়িতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বাপ্পারাজসহ আরও অনেকে। সেখানে মজার ছলে কনটেন্টও তৈরি করেছেন নাঈম, শাবনাজ ও বাপ্পারাজকে নিয়ে। শাবনাজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ও বাপ্পারাজ ভাই দুজনই মজা পাচ্ছি। ভালো লাগছে এ কারণে যে, মানুষ সিনেমাটির কথা ফের মনে করেছে। নায়ক-নায়িকার আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে নিজেরা সংযোগ করতে পারছেন। ওই সময় বেশ প্রশংসিত হয়েছে সিনেমাটি। আবার প্রশংসিত হচ্ছে, যা একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে বড় পাওয়া। এ অভিনেত্রী বলেন, সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শ্বকরা তা দেখে, তখন হয়তো সেটি হিট হয় বা আলোচিত হয়। তারপর মানুষ তা ভুলে যায়। কেননা, এত বছরে কত সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, কত নতুন নতুন গল্প এসেছে, সবই নতুন। এরই মধ্যে ২৯ বছর আগের ওই সিনেমার পুরোনো সংলাপ নিয়ে ফের চর্চা হচ্ছে। বিষয়টি সত্যিই ভালো লাগার। শাবনাজ আরও বললেন, ‘একটা ভালো সিনেমা যে কতটা শক্তিশালী তা ্আবারও প্রমাণ হলো এত বছর পরও এ প্রজন্ম সেই ছবির সংলাপ, দৃশ্য ও গানের সঙ্গে নিজেদের কানেক্ট করছে, এটাই ভীষণ ভালো লাগার।’ অভিনেতা নাঈম বলেন, ফিল্ম হচ্ছে একটি বিশাল মিডিয়া, একটি ফিল্ম যদি যথাযথভাবে নির্মাণ করা যায় তা অবশ্যই কালজয়ী হয়ে ওঠে। এর প্রতিটি দৃশ্য চিরদিন দর্শ্বকমনে গেঁথে থাকে। এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘প্রেমের সমাধি’ ছবির এ সংলাপটি। দীর্ঘ ২৯ বছর পর এভাবে চর্চিত হওয়ার কারণ সুনির্মাণে তা দর্শ্বকের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছে। বিষয়টি নিয়ে সত্যিই আমি খুব এক্সাইটেড। অভিনেতা নাঈম বলেন, ফেসবুকে আমাদের একটি গ্রুপ আছে, গ্রুপের সবাই বলছিল বিষয়টি নিয়ে সবাই গেট টুগেদারের মাধ্যমে এটি সেলিব্রেট করতে চায়। আমি বললাম ঠিক আছে টাঙ্গাইলে আমার বাড়িতেই আয়োজন হোক। সেখানে বাপ্পারাজ, ওমর সানী, দিঠি আনোয়ার, ইমন সাহা, বিপ্লব সাহা, মিশা সওদাগরসহ অনেকে এলেন। খেলাধুলা, খাওয়াদাওয়াসহ বেশ মজা করে সময় কাটালাম। এ সময় আমার বড় মেয়ে নামিরা বাপ্পারাজকে বলল, বাপ্পা আংকেল এ বিষয়টি নিয়ে আমি একটি ভিডিও তৈরি করতে চাই। বাপ্পা বললেন, ঠিক আছে চলো। তারপর সেই দৃশ্য- বাপ্পারাজ গাড়ি চালিয়ে এসে নাঈমকে জিজ্ঞেস করে, ‘নাঈম আমার হেনা কোথায়?’ এরপর উপস্থিত সবাই মিলে গেয়ে ওঠেন ‘প্রেমের সমাধি ভেঙে...।’ ভিডিওর আইডিয়াটা ছিল নামিরার। বাপ্পারাজ, শাবনাজ, নাঈম-তিনজনই একই সুরে বলেন, ‘দীর্ঘ ২৯ বছর পর একটি সংলাপ দর্শ্বকমনে এভাবে আলোড়ন তুলবে এমন অবিশ্বাস্য ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করল, দর্শ্বক এখনো আমাদের কতটা ভালোবাসে। এটিই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সবাইকে অজস্র ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা জানাচ্ছি।’