অমর কথাসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী তাঁর বই পড়া প্রবন্ধে বলেছেন; দেশে যত হাসপাতাল আছে তার চেয়েও বেশি দরকার লাইব্রেরি। সমাজ, রাষ্ট্র, গোটা ঘুমন্ত জাতিকে জাগ্রত করতে হলে, ঘুণে ধরা সমাজকে জাগিয়ে তুলতে হলে, অবশ্যই বই পড়তে হবে।
উন্নাসিক অনেকেই এখন বই পড়ার সময় বা কারণ খুঁজে পায় না। কেন পড়ব, কোথায় পড়ব- অনেক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বই পড়ার অভ্যাস, পড়ার সুযোগ এবং বই পড়ার উপকারিতার বিষয়ে কিছু পরামর্শ এখানে তুলে ধরা হলো, যা পাঠ্যাভ্যাস তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
বই পড়ার প্রথম এবং সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বই নিয়ে বসা বা শুরু করা। কোনো বই পড়া উপভোগ না করলে তা সঙ্গে সঙ্গেই বাদ দিন। একটি বই পড়লেই জীবন বদলে যাবে না, কিন্তু প্রতিদিন পড়ার অভ্যাস গড়লে জীবন বদলে যেতে বাধ্য। পড়ার জন্য বই পছন্দ করার ক্ষেত্রে, সমসাময়িক বইয়ের থেকে পুরোনো দিনের বইয়ের প্রতি বেশি মনোযোগ দিন। বই যে কোনো মাধ্যমের হতে পারে। ছাপা বই, ই-বুক, অডিও বই। বই পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো বই পড়লেই যে অনেক কিছু জানা যাবে, এমনও নয়। বরং বইটি কতটা আপনার মনে আর মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলল সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো বই পড়ুন, সেরা বইগুলো আবার পড়ুন, আর যুগান্তকারী বইগুলো সংগ্রহে রাখুন। একটি খারাপ বইয়ের কারণে পড়া ছেড়ে না দিয়ে, বইটি বাদ দিন। যদি কোনো বই আপনার মনে গভীর দাগ ফেলে, অবশ্যই বছরে একবার বা আরও বেশিবার সেই বইটি পড়ুন। দ্রুত পড়ার থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়ার দিকে ঝোঁকাই ভালো। বই সঙ্গে রাখুন, একটি বইয়ের আর কতই বা ওজন। এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেখানে আপনি বই পড়ার সুন্দর সুযোগ পাবেন। অন্যের দ্বারা প্রভাবিত বেশি না হয়ে নিজের পছন্দের বই পড়ুন। ভালো বই সাধারণত দ্রুত পড়া যায় না, কারণ ভালো বই আপনাকে থামতে বাধ্য করবে, ভাবতে বাধ্য করবে। বই পড়ে কিছু শেখা বা জানা জরুরি। মুখস্থ করা কিংবা মনে রাখার চেষ্টা জরুরি নয়। শিখতে পারলে এমনিতেই মনে থাকবে। পড়ার অভ্যাস গড়তে চাইলে পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন ৫ মিনিট, ১০ মিনিট, ২০ বা ৩০ মিনিট সময় নির্ধারণ করুন। বই পড়ার সময় নোট নেওয়া শুধু পড়ে যাওয়ার থেকে ১০ গুণ বেশি কার্যকরী। একই মানুষ কখনো এক বই দুই বার পড়ে না। কারণ দ্বিতীয়বার পড়ার সময় সে একজন বদলে যাওয়া মানুষ। বই কেনা বিনিয়োগ, খরচ না। লাইব্রেরিতে একটি সাধারণ বইও পড়ে ফেলা যায় কিন্তু আড্ডার মধ্যে একটা অসাধারণ বইও ভালো লাগবে না। বই পড়ার পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটি বইকে সর্বোচ্চ তিনটি সুযোগ দেওয়া যায়, এরপরও যদি ভালো না লাগে, তাহলে সেটা বাদ দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বড় বড় মোটা বই মানেই ভালো, আর ছোট বই মানেই মানসম্মত নয়, এই ধারণা ভুল। পৃথিবী বদলে দেওয়া অনেক ছোটগল্প রয়েছে। আপনার জন্য বই পড়া শুরু করার সব থেকে ভালো সময় ছিল ১০ বছর আগে, দ্বিতীয় ভালো সময় হচ্ছে ‘আজ’। একসময় বই উপহার ভালোবাসা ও মর্যাদার প্রতীক ছিল। সেই দিন ফিরে আসুক।
রহিম ইবনে বাহাজ