লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের আশ্বাসের পর থেকেই চক্রান্তকারীরা ঝামেলা শুরু করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উত্তেজিত হবেন না, বিভ্রান্ত হয়ে তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে জুলাই অভ্যুত্থানের বীর শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭১ ও ৯০ এর পর নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে ২৪ এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। কিন্তু জুলাইয়ের বিজয়ের কৃতিত্ব কার? অনেকে দাবি করছেন তাদের, কিন্তু এই কৃতিত্ব জনগণের, দেশের মানুষের। সবাই নেমে এসেছিলেন। সবার লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আজকে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যেন বিফলে না যায়।
দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়েছে, নতুন একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এই গণতন্ত্রে যেন উত্তরণ না ঘটে তার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে। এমনকি আমার নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা হচ্ছে। এটা কেন করা হচ্ছে? ভয় পেয়ে, তারা ভয় পেয়েছে। তারেক রহমান তো জাতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। এখন তিনি যদি ফিরে আসেন তাহলে তারা যাবে কোথায়? আমি এটুকু আশ্বাস দিতে পারি, তারা সঠিক জায়গায় থাকবে। তাই আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। আমরা আগেই উপলব্ধি করেছিলাম তৎকালীন সরকার দেশকে যেখানে নিয়ে গেছে, সেখান থেকে উত্তরণ প্রয়োজন ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে বিএনপির মতো এতো ত্যাগ কেউ স্বীকার করেছে কী না তা জানা নেই। ২০ হাজার নেতাকর্মীকে বিচারবর্হিভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতোকিছুর পরও বিএনপি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এই দেশে যা কিছু মহান অর্জন হয়েছে বিএনপির হাতে। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল; বাংলাদেশে যে স্বাধীনতার ঘোষণা, সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল থেকে প্রথম যে রাজনৈতিক সংস্কার করে একটা মুক্ত রাজনীতি; বহুদলীয় গণতন্ত্র এটা জিয়াউর রহমান করেছিলেন। সমস্ত সংবাদপত্রগুলোকে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন। চারটি সরকার পত্রিকা ছাড়া সব বন্ধ করে দিয়েছিল। সকল মৌলিক অধিকার চলে গিয়েছিল, ওই ফ্যাসিস্টরা এভাবেই দেশকে গোলাম বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল। পরবর্তী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছে, তিনি আমাদের অনেক আপত্তি থাকা সত্বেও জনগণের চাওয়ার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করেছিলাম। কারণ বিএনপি হচ্ছে সেই দল যারা সত্যিকার অর্থেই দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়।
ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লন্ডনে তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর ষড়যন্ত্র শুরু হলো- নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। এদেশের মানুষ সংগ্রাম-লড়াই করেছে, তারা তাদের যে দাবি (নির্বাচন) সেটি আদায় করে নেবে এবং এই নির্বাচন অবশ্যই ফেব্রুয়ারি মাসের যে ঘোষিত সময় সেই সময়ের মধ্যে নিশ্চয়ই অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য আমরা নির্বাচন চাইছি না, আমরা চাইছি বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি হোক। আমরা চাইছি, মানুষ তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করুক এবং তার জন্য সংস্কারের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু প্রায় একমত হয়েছি।
পাতানো ফাঁদে নেতা-কর্মীদের পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের শত্রু চতুর্দিকে; বিএনপি হচ্ছে ডেমোক্রেসি, ফ্রিডম এবং ডেভলপমেন্ট। এটি আমরাই করব, ভবিষ্যতে আমরাই বাংলাদেশকে একেবারে উন্নয়নের চরমে নিয়ে যাবো। আমরা হয়তো থাকবো না কিন্তু আমদের পরবর্তী প্রজন্ম সেখানে নিয়ে যাবেন। কাজেই এদের কোন পাতা ফাঁদে আমরা পা দেবো না, এরা ফাঁদ পাতছে এবং আমাদের উস্কানি দিচ্ছে যেন ঝাপিয়ে পড়ে প্রতিবাদ করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে এমন একটা অবস্থা তৈরি করি যেন গণতন্ত্রের উত্তরণটা ব্যহত হয়। এই ফাঁদে আমরা পা দেবো না। আমরা আমরা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সহনশীলতার সঙ্গে শান্তির সঙ্গে আমাদের নেতার যে নির্দেশিত পথ সেই পথ ধরে আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবো।’
এসময় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত