সবুজ শ্যামল বনের মাঝখানে ছিল একটি বিশাল আম গাছ। সেই গাছের এক মোটা ডালে বাস করত ছোট্ট এক টুনটুনি। দেখতে সে যতই ছোট হোক না কেন, মাথা তার ছিল খাসা! সারা দিন বনের পাখিদের সঙ্গে গল্প করত, গান গাইত, আর মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করেও সবাইকে হাসাতো। কিন্তু একটা ব্যাপার টুনটুনির জীবনে ভয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেটা হলো-বনের দুষ্টু বাঘ ‘খাদু বাঘ’। খাদু বাঘটা ছিল একেবারে খাদক প্রকৃতির। যার চোখে পড়ে, তাকেই খাওয়ার লোভ জাগে তার। আর সে বহুদিন ধরে টুনটুনিকে ধরে খাওয়ার চিন্তায় মগ্ন। এক দিন দুপুরে রোদ ঝলমল করছে। খাদু বাঘ একটা গাছের ছায়ায় শুয়ে শুয়ে পেটের ভিতর গরগর আওয়াজ শুনতে লাগল। তার খুব ক্ষুধা লেগেছে। হঠাৎ টুনটুনির ডাক কানে আসতেই খাদু বাঘ গর্জন করে উঠল, ‘ওরে টুনটুনি! আজ আর তোকে ছাড়ব না। আজকেই খেয়ে ফেলব।’
টুনটুনি ভয়ে কাঁপল না, বরং মিষ্টি হেসে বলল- ‘আরে বাঘ মামা! তোমার মতো এমন শক্তিশালী প্রাণী কি আমার মতো ছোট্ট টুনটুনিকে খাবে? আমি তো বরং তোমার উপকার করতে চাই।’
বাঘ অবাক হয়ে থেমে গেল।
-উপকার? সেটা আবার কেমন?’
টুনটুনি বলল, ‘আমি খবর পেয়েছি, রাজবাড়িতে আজ ভোজ হচ্ছে। হাঁস, মুরগি, ভেড়া, মাছ রান্না হচ্ছে। তুমি যদি চাও, আমি তোমাকে নিয়ে যাই।’
খাদু বাঘের চোখ চকচক করে উঠল। সে ভাবল, ‘একটা ছোট্ট টুনটুনির চেয়ে রাজবাড়ির হাঁস-মুরগি হাজার গুণ মজা হবে।’ তাই সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। টুনটুনি ডানা ঝাপটিয়ে উড়তে লাগল আর পেছনে হাঁটতে লাগল খাদু বাঘ। পথটা ছিল অনেক লম্বা। যাত্রাপথে টুনটুনি নানান রকম গল্প করে বাঘকে আনন্দে মাতিয়ে রাখল, যাতে সে রাগ না করে। রাজবাড়ির ফটকের কাছে পৌঁছে টুনটুনি বলল, ‘বাঘ মামা, তুমি আগে ভিতরে ঢুকো। আমি ছোট পাখি, গেটকিপার আমাকে কিছু বলবে না। কিন্তু তোমাকে দেখে হয়তো ভয় পাবে।’
খাদু বাঘ তখন এতটাই ক্ষুধার্ত আর লোভে অন্ধ যে কিছুই বুঝল না। সে গর্জন করে ফটক ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। আর যেই না ঢুকল, অমনি রাজবাড়ির ভিতর হইচই পড়ে গেল, বাঘ! বাঘ! বাঘ ঢুকেছে!’
রাজবাড়ির চাকর-বাকর, সৈন্য-সিপাহি সবাই হাতে লাঠি, বাঁশ, জাল নিয়ে ছুটে এলো। তারা একযোগে বাঘটিকে ঘিরে ফেলল। বাঘ ভয়ে দিশাহারা হয়ে ছুটে পালাল। এত দৌড় সে জীবনে আর কখনো দেয়নি! একবারও টুনটুনির দিকে তাকাতে পারল না। এদিকে গাছের ডালে বসে টুনটুনি খিলখিল করে হেসে উঠল।
- ‘হা হা হা! বুদ্ধি যার, তারই জয় হয়।’
তারপর সে অন্য পাখিদের ডেকে বলল, দেখলে ভাইরা, শুধু শক্তি দিয়ে সবকিছু হয় না। কখনো কখনো মাথার বুদ্ধি সবচেয়ে বড় শক্তি।’
সব পাখি হাততালি দিয়ে টুনটুনিকে অভিনন্দন জানাল। বনের ভিতর আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হলো। এদিকে খাদু বাঘ লজ্জায় আর কোনো দিন টুনটুনির সামনে আসার সাহস করল না।
বুদ্ধি শক্তির চেয়ে বড় :
শুধু পেশির জোরে সব জয় করা যায় না, বুদ্ধির ব্যবহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
লোভের পরিণাম খারাপ :
অতি লোভ মানুষকে বা পশুকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয়।
ছোট হলেও হেলাফেলা নয় :
আকারে ছোট হলেও বুদ্ধি দিয়ে বড় বিপদ সামলানো যায়।