ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে চলাচলের একটি রাস্তায় ইটের স্তূপ এবং টিনের বেড়া দিয়ে সড়ক বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত পাঁচটি পরিবারসহ স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা চরাচলে প্রতিদিনই বেগ পোহাচ্ছেন। এমন অস্থায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত হেলথ ইন্সপেক্টর আব্দুল মান্নান চকদার (৮৫) ওই সড়কটি উদ্ধারের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ পত্রে উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা বুলবুল চকদার, আব্দুল জব্বার চকদার, সাইফুল চকদার, আব্দুল ছালাম চকদারসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তদের সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ চলছিল আব্দুল মান্নানের। সেই জেরে প্রথমে রাস্তার ওপর ইটের স্তূপ তৈরি করা হয় এবং পরে সেখানে টিনের বেড়া দেওয়া হয়। এতে ওই এলাকার বাসিন্দা ও শ্রীনগর দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটছে।
ভুক্তভোগী আব্দুল মান্নান চকদার বলেন, রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা রীতিমতো অবরুদ্ধ। এদিক দিয়ে আসা-যাওয়া করা শিক্ষার্থীদেরও চলাচলে চরম প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, পারিবারিক বিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু চলাচলের রাস্তা বন্ধ করা অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানসিকতার পরিচয়। তারা দ্রুত প্রশাসনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত বুলবুল চকদার বলেন, ঘর নির্মাণের জন্য ইট এনেছি। জায়গার সংকটের কারণে তা আমার নিজস্ব জায়গায় রেখেছি। তবে এটি চলাচলের রাস্তা, এটিও আমি স্বীকার করি। ঘরের কাজ শেষ হলে ইট সরিয়ে দেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। পরে এসিল্যান্ড ভূমি অফিসের একজন প্রতিনিধি ও রাজীবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী ফকিরকে ঘটনাস্থলে পাঠান। চেয়ারম্যান সাহেব দায়সারাভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলে যান। কিন্তু এর সমাধানে উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা আজ অবধি দৃষ্টিগোচর হয়নি। যদিও এটা কোনো সরকারি রেকর্ড রাস্তা না, কিন্তু বিগত ৭০-৮০ বছরের প্রচলিত গ্রামীণ রাস্তা। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে প্রতিটি নাগরিকের অবাধ চলাচলের স্বাধীনতার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। যেকোনো প্রচলিত রাস্তা বন্ধ করার আগে স্থানীয় সরকার বা কর্তৃপক্ষের নিকট হতে অনুমতি নিতে হয়, অন্যথায় এটি অপরাধ। এলাকাবাসী এর সুস্পষ্ট প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে রাজিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আলী ফকির বলেন, রাস্তা বন্ধের বিষয়ে একটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম। তখন সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে পুনরায় রাস্তা বন্ধের বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাহউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, অভিযোগের পর ভূমি অফিসের একজন প্রতিনিধিকে সরেজমিনে পাঠানো হয়েছিল। তবে এটি মূলত পারিবারিক বিরোধ হওয়ায় সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই প্রশাসনের পক্ষে থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত