‘লোকে বলে বলেরে, ঘরবাড়ি ভালা না আমার, কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যেরও মাঝার’ মরমি কবি দেওয়ান হাছন রাজার এ গানের মতোই আজ ভালো নেই সিলেটের বিশ্বনাথের তার পৈতৃক জমিদার বাড়ি। অসংখ্য কালজয়ী মরমী গানের অমর স্রষ্টা, প্রভাবশালী এ রাজার রামপাশা গ্রামের বাড়ি ভগ্নদশায় টিকে আছে কোন মতে। অযত্ন-অবহেলায় নিশ্চিহ্নের পথে তার স্মৃতি চিহ্ন। একাধিকবার রক্ষার দাবি উঠলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, হাছন রাজার পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন রামপাশা এলাকার প্রভাবশালী জমিদার। তার আওতায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশার ও সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীর জমিদারী ছিল। হাছন রাজারা ছিলেন দুই ভাই। তার বাবার পরে লক্ষণশ্রীর জমিদারী দেখাশোনা করতেন তিনি আর রামপাশার জমিদারী দেখাশোনা করতেন তার বড়ভাই উবাইদুর রাজা চৌধুরী। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে বড়ভাই মারা গেলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে দুই জমিদারীর দায়িত্ব পড়ে হাছন রাজার হাতে। প্রারম্ভে জমিদারির মূল দেখাশুনা করতেম তার মা হুরমত জাহান। প্রথম জমিদারী বয়সে হাছন রাজা ভোগবিলাসী জীবনযাপন করলেও পরবর্তীতে এক আধ্যাত্মিক স্বপ্নের মাধ্যমে পাল্টে যায় তার জীবনের মোড়। ভোগ-বিলাসিতা ছেড়ে শুরু করেন সাধারণ জীবনযাপন।
সরেজমিন দেখা যায়, বাড়িটিতে ধ্বংসাবশেষ ছাড়া অবশিষ্ট নেই তেমন কিছুই। পরিত্যক্ত বাড়িটি ঘিলে খাচ্ছে আগাছা-পরগাছা। ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে স্থাপনার ইট-পেলেস্তারা। কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো একটি দ্বিতল কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ঘর, একটি ছাদবিহীন পাকা ঘর ও লতাগুল্মে ঘেরা একটি ধ্বংসপ্রায় দেয়াল। দুটি ঘরই দরজা-জানালাবিহীন। আছে জমিদার আমলের একটি বিশাল দীঘি। বাড়ির সামনেই রয়েছে রাজ পরিবারের পারিবারিক কবরস্থান।
বছরজুড়েই হাছন রাজার রামপাশার এ জমিদার বাড়িটি দেখতে আসেন বহু হাছন অনুরাগী, আউল-বাউল, মরমী কবি-গবেষক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন। কিন্তু বাড়িটি দর্শনে এসে সেটির করুণ দশা দেখে হতাশ হয়েই ফিরে যান তারা।
স্থানীয়রা জানান, হাছন রাজার শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু সংস্কার বা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ কখনোই নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনন্দা রায় বলেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক মহোদয় বিশ্বনাথ উপজেলার দর্শনীয় স্থানের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাওয়ায় আমি এই উপজেলার একমাত্র সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট হিসেবে হাছন রাজার বাড়ির নাম প্রস্তাব আকারে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়িটি নিয়ে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে জটিলতা ও অনাগ্রহ থাকায় সরকারিভাবে সেটিকে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল