জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, সবার নিকট গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সরকারকে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া যেনতেনভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসানোর অপচেষ্টা হলে দেশের আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে তা রুখে দিবে। অনেক এলাকায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা একটি দলের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা প্রদর্শন করছেন। এসব দলকানা কর্মকর্তাদের অপসারণ করে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের সেইসব পদে বসাতে হবে। প্রশাসন নিরপেক্ষ না হলে দেশে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
শনিবার দুপুরে শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে বগুড়া জেলা ও মহানগর উলামা-মাশায়েখ পরিষদ আয়োজিত বিশাল উলামা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ইসলামপন্থীদের জন্য সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে জামায়াত পূর্বের ঘোষিত যেকোনো আসনের প্রার্থী সরিয়ে নিবে। জুলাই বিপ্লবের পর একটি দল নিজেদের দেশের অঘোষিত মালিক মনে করছে। তারা অপরাধীদের থানা থেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিচ্ছে। দেশব্যাপী চাঁদাবাজীর মহোৎসব চলছে।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনার সরকার আলেম-উলামাদের নির্বিচারে জেলে বন্দী করেছিলেন। অথচ সেই জেলখানাতে বসেই আলেম সমাজ নিজেদের ভেতর ঐক্যের ভিত রচনা করেছেন। আগামী নির্বাচনে সেই ঐক্যের সত্যিকারের বাস্তবায়ন জাতি দেখবে ইনশাল্লাহ। জুলাই আন্দোলনে আলেম সমাজ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। অসংখ্য আলেম শহীদ হয়েছেন। দেশের মানুষের জন্য আলেমরা অকাতরে রক্ত ঝরিয়েছেন। জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যেভাবে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আমরা আন্দোলন করেছি। এবার দেশ গড়ার কাজেও আমাদের সবাইকে শীসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে হত্যা করেছে। এসকল হত্যার সাথে জড়িত বিচারক, আইনজীবী, সাক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছরেও আলেম সমাজ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। জুলাই বিপ্লবের পর সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ। প্রতিটি মসজিদে জুমার খুতবায় ঐক্যের বানী ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের মসজিদ হবে দাওয়াতী কাজ এবং ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু। সামাজিক ঐক্যের মাধ্যমেই আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে হলে ইসলামপন্থীদের বিকল্প নাই।
উলামা মাশায়েখ পরিষদ বগুড়া মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা আলমগীর হুসাইনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রিয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ শায়েখ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ, কেন্দ্রীয় উলামা বিভাগের সেক্রেটারি ড. খলিলুর রহমান মাদানী, জামায়াতে ইসলামী বগুড়া অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী বগুড়া জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকার, বগুড়া মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবিদুর রহমান সোহেল, জামিল মাদরাসার মুঈনে মুহতামিম মুফতি মাওলানা আতাউল্লাহ নিজামী, কারবালা মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা কাজী ফজলুল করিম রাজু, ইসলামী আন্দোলন বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আ.ন.ম মামুনুর রশীদ, ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল মতিন, খেলাফত মজলিশের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মামুন রহমানী, উলামা মাশায়েখ পরিষদ বগুড়া জেলার সভাপতি মাওলানা মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ।
সম্মেলনে ১০ দফা ঘোষণা পাঠ করে শোনানো হয়। সবশেষে দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উলামা মাশায়েখ পরিষদ বগুড়া জেলার সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল বাসেত ও মহানগর সেক্রেটারি ড. আবু সালেহ মামুন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই