বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন টেপারবিলের গহীন অরণ্যে লাগা আগুন রবিবার দ্বিতীয় দিনেও জ্বলছে। ইতোমধ্যে তিন একর বনের বিভিন্ন স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার সকাল সাতটায় লাগা এ আগুন এখন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুন আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য চারপাশে নালা (লাইন অব ফায়ার) কাটা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট গহীন বনের ঝোপঝাড় ও লতাগুল্ম কেটে তিন কিলোমিটার বনের গহীনের অর্ধেক এলাকা মাত্র দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত পানির পাইপ লাইন স্থাপন করতে পেরেছে। ওইদিন সন্ধ্যা হয়ে আসায় আলোর স্বল্পতা ও বাঘের উপদ্রব থাকায় কাজ বন্ধ করে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের কর্মীরা লোকলায় ও বন অফিসে ফিরে যান। সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন নেভাতে না পারায় সকাল থেকে রাতভর দাউ দাউ করে জ্বলছেই সুন্দরবনের টেরারবিল এলাকার গাছপালা ও লতাগুল্ম।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আশা করছেন রবিবারসকাল ৯ টার মধ্যে তারা আরও দেড় কিলোমিটার পানির পাইপলাইন টেনে আগুন নিভানোর প্রাথমিক কাজ শুরু করতে পারবেন। প্রথমে তারা ঘটনাস্থলের চারপাশে কাটা নালায় পানি ভরার কাজ শুরু করবেন। সুন্দরবনের গাছের পাতা পড়ে মাটির নিচে তৈরি হওয়া মিথেন গ্যাসের কারণে মরা শিকড় ধরে যাতে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্যই প্রথমে কাটা নালায় পানি ভরে দেওয়া হবে। এরপর সকালে বনের তিন কিলোমিটার দূরের খালে জোয়ারের পানি আসার পরই আগুন নেভানোর কাজ পুরোদমে শুরু হবে।
এদিকে সুন্দরবন বিভাগ এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে শনিবার রাতে চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) দ্বিতন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই তদন্ত কমিটিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ৪ মে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়ার লতিফের শিলা এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই যুগে সুন্দরবনের ২৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বন কর্মীদের পাশাপাশি তাদের শরণখোলা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও কচুয়ার চারটি ইউনিটের সদস্যরা রবিবার ভোর থেকেই সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করবেন। তবে আগুন আজ দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কি না সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলছে, গাছের পাতা পড়ে পচে সুন্দরবনের মাটির নিচে মিথেন গ্যাস থাকার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরও মাটির নিচে আতা গাছের মরা শিকড় বেয়ে অনেক জায়গায় ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে দাউদাউ করে ফের আগুন জ্বলে উঠতে পারে। সে কারণে সুন্দরবনেরৎ লাগা আগুন পুরোপুরি নেভাতে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফ ও) কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম ঘটনাস্থল থেকে জানান, সুন্দরবনের টেপারবিল এলাকার লাগা আগুন যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য রাতভর বনকর্মীরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই কাঁটা ফায়ার লাইনে পানি ভরার কাজ করেছেন। আগুনে এই বনের প্রাণপ্রকৃতির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ ও কি কারণে আগুন লেগেছে তার কারণ অনুসন্ধানে চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফকে প্রদান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে এই তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/একেএ