নওগাঁর মান্দায় কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মাঠে পেকে থাকা বোরো ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। খেত তলিয়ে অনেক ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো জমিতে ধান কাটলেও আবহাওয়া খারাপ থাকায় তা শুকানো যাচ্ছে না। খেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
স্থানীয়রা জানায়, আমন ধান কেটে নেওয়ার পর ওইসব জমিতে সরিষা ও আলুর আবাদ করা হয়েছিল। এ কারণে বোরো ধান রোপণ করতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই টানা বৃষ্টিতে পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছেন না তারা।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাত দিনে গড়ে প্রতিদিন বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রায় ২০ মিলিমিটার। টানা বৃষ্টির নজির সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়নি। এ সময় সাধারণত খরা থাকে। কিন্তু এ বছরের চিত্র পুরোটাই উল্টো। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে মান্দা উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর এবং সরিষা হয়েছিল ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে আলু ও সরিষা তুলে বোরো ধান রোপণ করতে কিছুটা দেরি হয়। এ কারণে ধান কাটা শুরু হয়েছে বৃষ্টির মধ্যে। উপজেলার নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল বলেন, আমন ধান কাটার পর তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। পরে সেই জমিতে বোরো ধান লাগাই। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেই ধান ঘরে তুলতে পারছি না। খেতেই ধান পচে যাচ্ছে। খুব বিপদে আছি। একই গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু ধান কেটেছি। কিন্তু বৃষ্টিতে তা ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, অনেক প্রান্তিক কৃষক বোরো ধান রোপণের সময় সার ও কীটনাশক দোকান থেকে বাকিতে কিনেছেন। এখন বাকি পরিশোধের জন্য তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠ থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারায় দেনা পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। দেরিতে রোপণ করা হলে বোরো ধান সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকেই কাটা ও মাড়াই শুরু হয়। কিন্তু এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে সেই ধারা ব্যাহত হয়েছে। এতে ধানের বড় একটা অংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নুরুল্লাবাদ ইউপি সদস্য আহসান হাবীব বলেন, কয়েকদিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। আবহাওয়া ভালো না হলে বোরো চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন জানান, এ বছর মান্দা উপজেলায় ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাদ হয় ১৯ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। টানা বৃষ্টিতে বোরো খেত তলিয়ে যাওয়ায় আনুমানিক ২৫ হেক্টর জমির আংশিক ধানের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে দেরিতে রোপণ করা ধান কৃষকরা কাটতে পারছেন না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।