শরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্স চালকচক্রে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। এ চক্রের কাছে শুধু জেলাবাসীই নয়, জেলার ওপর দিয়ে চলাচলকারীরা অন্যও জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রাণহানিও হয়েছে। তবুও থামছে না তাদের দাপট। জরুরি মুহূর্তে রোগী পরিবহনে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে এ চক্রের সদস্যরা ঢাকা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ার কারণে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সবুজ দেওয়ানকে পুলিশ শনিবার গ্রেপ্তার করেছে। জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান ও সাবেক কর্মচারীদের একটি অংশ এ অ্যাম্বুলেন্স চক্র গড়ে তুলেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২০টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এ চক্র অন্য জেলা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী তুলতেও বাধা দেয়। গ্রেপ্তার হওয়া সবুজ দেওয়ান এ চক্রের অন্যতম সদস্য। তার বাবা তাহের দেওয়ান সিভিল সার্জনের গাড়ির চালক। শনিবার সন্তানসম্ভবা অর্চনা মুলকে (২৩) গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় নিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর দাবি করেন, ‘সকালে অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে এসি মেরামতের জন্য ছিল, কোনো রোগীর স্বজন ফোন করেননি।’ শরীয়তপুরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে সাতটি। সদর হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। জেলার ৫টি ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স, ২০ শয্যার একটি থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ রোগীকে স্থানান্তর করতে হয়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় রোগী পরিবহনে গড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হলেও ওই চক্রের নিয়ন্ত্রিত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালক সমিতির সভাপতি আবদুল হাই বলেন, ‘স্থানভেদে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। শরীয়তপুর জেলার সিভিল সার্জন রেহান উদ্দিন বলেন, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে কোনো নীতিমালা নেই, তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিকল অ্যাম্বুলেন্স মেরামত ও চালক নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে নবজাতক মারা যায়। এ ঘটনায় চারজনের নামে মামলা হয়েছে। আটক সবুজ দেওয়ানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত আছে। হাসপাতালের ডাক্তার বা অন্য কোনো ব্যক্তি জড়িত আছে কি না সেটা তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।