ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘ইএসজি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে দুই দিনব্যাপী বহুল প্রতীক্ষিত ‘ইএসজি বুটক্যাম্প ২০২৫’। এনভায়রনমেন্ট, সোশাল এবং গভারনেন্স (ইএসজি) ভিত্তিক কর্পোরেট রূপান্তরের লক্ষ্যে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন খাতের শতাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে ছিলেন সি-স্যুট এক্সিকিউটিভ, সিনিয়র ডিরেক্টর এবং বিভাগীয় প্রধানরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ইউএন গ্লোবাল কম্প্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (ইউএন-জিসিএনবি), এবং সুইস কন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ এর অংশীদারিত্বে আয়োজিত এই বুটক্যাম্পে সহযোগিতা করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই লজিস্টিকস এবং গ্রামীণ ডানোন। অংশগ্রহণকারীরা এ আয়োজনকে বাংলাদেশের টেকসই কর্পোরেট অগ্রযাত্রার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ইএসজি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাদমান সাকিব আনিক কর্পোরেট খাতে দায়িত্বশীল এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “ইএসজি শুধু একটি ট্রেন্ড নয়—এটি ভবিষ্যতের জন্য কর্পোরেট মূল্যবোধের নতুন মানদণ্ড।”
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান এবং প্রো-ফর-প্রো’র প্রতিষ্ঠাতা কামরান বকর। তিনি বলেন, “গ্লোবাল ইএসজি নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে কর্পোরেট ও নীতিনির্ধারকদের মাঝে সমন্বিত উদ্যোগ এবং বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি।”
ইএসজি ইনস্টিটিউট সিঙ্গাপুর-এর চেয়ারপার্সন জোয়ান ফ্লিন বলেন, “বাংলাদেশ ইএসজি-র ক্ষেত্রে এক নবীন পরিচিতি তৈরি করছে। তরুণ কর্মশক্তি, শক্তিশালী প্রাইভেট সেক্টর ও সরকারিভাবে গৃহীত নীতিগত উদ্যোগের সমন্বয়ে দেশটি এশিয়ায় টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাস্টেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক চৌধুরী লিয়াকত আলী বলেন, “এই ধরনের আয়োজন দেশের ব্যবসায়িক খাতে টেকসই চিন্তাভাবনার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট সেক্টর একযোগে কাজ করলে ভবিষ্যৎ হবে আরও দায়িত্বশীল ও সুশাসনভিত্তিক।”
বুটক্যাম্পে এফএমসিজি, আরএমজি, ম্যানুফ্যাকচারিং, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, জ্বালানি, অবকাঠামো এবং ফার্মাসিউটিক্যালস খাত নিয়ে আলাদা সেশন অনুষ্ঠিত হয়। দেশি-বিদেশি ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টরা অংশগ্রহণকারীদের ইএসজি বাস্তবায়নের কৌশল ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার নানা দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
বুটক্যাম্পের সমাপ্তি ঘটে শনিবার (২৬ জুলাই) এক জমকালো গালা ইভেন্টের মধ্য দিয়ে। ইএসজি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান সাদিয়া সামিরা সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “ইএসজি এখন আর বিকল্প নয়, এটি কর্পোরেট টিকে থাকার মূল চালিকাশক্তি। আমরা সবাই মিলে একটি সবুজ ও ন্যায্য ভবিষ্যতের জন্য কাজ করছি।”
গালার আয়োজনে বাংলাদেশের প্রথম “ইএসজি কেসবুক” প্রকাশিত হয়, যা যৌথভাবে প্রস্তুত করে ইএসজি ইনস্টিটিউট এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স (NSU SBE)। এতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উল্লেখযোগ্য টেকসই ব্যবসায়িক অনুশীলন ও কেস স্টাডি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ইএসজি নেতৃত্বকে তুলে ধরবে।
এছাড়া গালায় “ইএসজি এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ডস”-এর ঘোষণাও দেওয়া হয়। এই সম্মাননা দেওয়া হবে সেসব প্রতিষ্ঠানকে, যারা দায়িত্বশীল ব্যবসা এবং টেকসই উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। অনুষ্ঠানে আয়োজিত ফায়ারসাইড চ্যাট ও প্যানেল সেশনে অংশ নেন ডেনমার্ক দূতাবাস, শান্তা হোল্ডিংস, গ্রামীণ ডানোন ও অন্যান্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।
এই বুটক্যাম্পকে দেশের কর্পোরেট জগতে ইএসজি চর্চার নতুন গতি সৃষ্টিকারী উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ শুধু টেকসই উন্নয়নের কথা বলছে না—বাস্তবায়নেও দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল