৬৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন। গত ছয় বছর ধরে বিপুল এই অর্থ ব্যয় হলেও নগরীর অধিকাংশ সড়কের বেহাল কাটেনি। ড্রেনেজব্যবস্থা আরও নাজুক, একটু বৃষ্টিতেই পানিতে নগরী তলিয়ে যায়। দুর্ভোগের শেষ নেই নগরবাসীর। এ অবস্থায় খুলনার উন্নয়নে সোচ্চার নাগরিক নেতাদের অভিযোগ, যেনতেনভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করায় অর্থ অপচয় হয়েছে। তারা বলছেন, অর্থ অপচয় আটকাতে দায়িত্বে থাকা প্রশাসকরাও একপ্রকার ব্যর্থ হচ্ছেন।
জানা যায়, ভারী বৃষ্টির মধ্যে নগরীর মজিদ সরণি, কেডিএ অ্যাপ্রোস রোড ও ইসলামপুর রোডসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। এর মধ্যে মজিদ সরণির কেডিএ অ্যাপ্রোস রোডের সংযোগস্থল থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পাইপলাইন বসাতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছে ওয়াসা। একই সময় একই সড়কে কেসিসি প্রায় ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু করেছে। কাজের স্থানে গর্ত খুঁড়ে সেখানে রড, ইট, বালুর কাজ হয়েছে। অন্যদিকে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে মাত্র কিছুদিন আগে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ফুটপাতে দৃষ্টিনন্দন টাইলস বসানো হলেও এখন তা ভেঙে ড্রেনের সংস্কারকাজ করছে কেসিসি। ওয়াসা ও কেসিসির মধ্যে উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা দুই প্রতিষ্ঠানেই এখন প্রশাসক হিসেবে খুলনা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দায়িত্বে রয়েছেন। জনগণের অর্থ অপচয় রোধে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। সমন্বয়হীনতায় অর্থের অপচয় গ্রহণযোগ্য নয়।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান সেলিম আহম্মেদ দাবি করেন, মজিদ সরণিতে প্রশস্তকরণে কাজ বন্ধ রাখতে কেসিসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যে রাস্তা কিছুদিনের মধ্যে খোঁড়া হবে সেখানে এখন প্রশস্তকরণের কাজ করলে সরকারি অর্থের অপচয় হবে তা-ও বলা হয়েছে। ওয়াসার পাইপ বসানোর কাজ শেষ হলে কেসিসি সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ করলে অর্থ অপচয় ও জনভোগান্তি এড়ানো যায়। তবে কেসিসি প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান অভিযোগ করে বলেন, ওয়াসার কারণে কেসিসির রাস্তা মেরামত প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করা যায়নি। মন্ত্রণালয় চলতি জুলাই পর্যন্ত কাজ শেষ করার সময় দিয়েছে। আপাতত ওয়াসাকে মজিদ সরণিতে খুঁড়তে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করেনি।
এদিকে কেসিসি প্রশাসক ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার বলেন, এখানে যেন দ্বৈততা না হয়, অর্থ অপচয় না হয় সেই ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কথা বলে যেটা ভালো সেটা করা হবে। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।