চট্টগ্রামের অপরাধের অন্ধকার জগতের সদস্যরা শিকার হচ্ছেন টার্গেট কিলিংয়ে। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা পুরোনো শত্রুতার জের ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে বিচরণকারীরাই পরিণত হচ্ছে লক্ষ্যবস্তুতে। ফলে প্রতিনিয়তই দীর্ঘ হচ্ছে তাদের লাশের সারি। আন্ডারওয়ার্ল্ডের এমন অস্থিরতায় ‘স্বস্তি’তে নেই চট্টগ্রামের প্রশাসন।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) রাসেল বলেন, ‘অপরাধ যখন হয় সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এরই মধ্যে যতগুলো খুন হয়েছে সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে আমাদের সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
র্যাব-৭ মুখপাত্র এআরএম মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি সময়ের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এলাকায় পেশিশক্তি দেখানোর দ্বন্দ্বের জেরে অপরাধগুলো হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা খুনে রূপ নিচ্ছে। অনেক মামলার রহস্য উন্মোচনও হয়েছে। সব অপরাধ রোধে কাজ করছে র্যাব।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্ষমতার পালাবদলের হাওয়া লাগে চট্টগ্রামের অপরাধের অন্ধকার জগতেও। জামিনে মুক্তি পেয়ে অপরাধের পুরোনো রাজ্যে সক্রিয় হয় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। দেশের বাইরে কিংবা ভিতরে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ফের পুরোদমে সক্রিয় হয়। এরপর থেকে সাম্রাজ্যে সক্রিয়া হওয়া সন্ত্রাসীদের মধ্যে শুরু হয় আধিপত্য বিস্তার, জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি নিয়ে দ্বন্দ্ব। সঙ্গে রয়েছে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন খাত, বালুমহাল নানান খাতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই। এ দ্বন্দ্বের জেরে চট্টগ্রামে গত ছয় মাসে হামলা, পাল্টা হামলা এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে শত শত। খুনের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে অর্ধশত। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে পালিয়ে থাকলেও অন্ধকার জগতে ঠিকই বিচরণ রয়েছে আলোচিত ‘এইট মার্ডার’ মামলার মৃত্যুদ প্রাপ্ত সাজ্জাদ হোসেন ওরফে সাজ্জাদ খান। তার বাহিনী মাঠে রয়েছে পুরোদমে সক্রিয়। এক সময় ‘সাজ্জাদ বাহিনীর’ একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা। তার সঙ্গে যুক্ত হয় সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বুড়ির নাতি। পরে বুড়ির নাতি সাজ্জাদ পরিচিতি পায় ছোট সাজ্জাদ হিসেবে। তাদের নেতৃত্বেই চলছিল সাজ্জাদ বাহিনীর নগরীর বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্য, ঝুট ব্যবসা, বালুমহালসহ অন্যান্য খাতের চাঁদাবাজি। কিন্তু গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর বাড়তে থাকে সাম্রাজ্যের পরিধি। সঙ্গে সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে বাবলা ও বর্তমানে কারাবন্দি সাজ্জাদের। এরই জের ধরে গত ২৮ মার্চ ফিল্মি কায়দায় নগরীর বাকলিয়া থানাধীন এক্সেস রোড এলাকায় ব্রাশ ফায়ার করা হয় বাবলাকে বহনকারী প্রাইভেট কারে। যাতে বাবলা প্রাণে রক্ষা পেলেও নিহত হন কারে থাকা দুজন। একইভাবে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ছিল সাজ্জাদ খান ও ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে ঢাকাইয়্যা আকবরের। দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে দুই সাজ্জাদের বিরুদ্ধে কথা বলত ঢাকাইয়্যা আকবর। গত ২৪ মে পতেঙ্গা সৈকতে আড্ডা দেওয়ার সময় ব্রাশ ফায়ার করা হয় ঢাকাইয়্যা আকবরকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ঢাকাইয়্যা আকবর। এ ঘটনা অভিযোগের তির ওঠে দুই সাজ্জাদের বিরুদ্ধে। ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলার সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয় নেজাম উদ্দিন এবং আবু সালেককে। পুলিশের দাবি, এলাকার চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয় এই দুজনকে।