চট্টগ্রামে এ বছর আর্থিক সংকটে ভুগছেন কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা। তারা জানান, গত বছরের চামড়া বিক্রির অর্থ ঢাকার ট্যানারি মালিকরা এখনো পুরোপুরি পরিশোধ করেননি। তাই বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এতে বড় ধরনের ব্যবসায়িক ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। আসন্ন ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সাড়ে ৪ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সাড়ে ৩ লাখ। ছাগল ও ভেড়ার ১ লাখ। এখানকার ২০-২৫ কোটি টাকার চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন নগরীর আতুরার ডিপো এলাকাকেন্দ্রিক ৩০-৪০ জন আড়তদার। এ এলাকায় রয়েছে চামড়ার অর্ধশতাধিক আড়ত। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার কাঁচা চামড়া কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে কিনে ট্রাক বোঝাই করে আতুরার ডিপো এলাকায় নিয়ে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে আড়তদাররা লবণ মাখিয়ে গুদামে সংরক্ষণ করেন। এভাবে তিন-চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ট্যানারি মালিকরা এসে লবণযুক্ত চামড়া কিনে নিয়ে যান। আড়তদাররা জানান, চট্টগ্রামে একসময় ২২টি ট্যানারি থাকলেও ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ২১টিই বন্ধ হয়ে গেছে। রিফ লেদার নামের একটিমাত্র ট্যানারি বর্তমানে টিকে আছে। তারা ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পিস চামড়া কিনে থাকে। বাকি চামড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে কিছু নগদ ও কিছু বাকিতে বিক্রি করতে হয়।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী-আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, তাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১২ জন হলেও সবাই এ ব্যবসায় এখন আর সক্রিয় নেই। সদস্য ও সদস্যের বাইরে প্রায় ৩০ জন ব্যবসায়ী এবার কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাদের সবারই রয়েছে আর্থিকসংকট। কভিড মহামারির আগ পর্যন্ত ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা। সেই টাকা এখনো পাওয়া যায়নি। করোনা-পরবর্তী চামড়া বিক্রির টাকা ট্যানারি মালিকরা ঠিকঠাক পরিশোধ করলেও গত বছরের (২০২৪ সাল) টাকা এখনো আটকে রেখেছেন। যার অর্ধেক ঈদের আগে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের চামড়ার আগড়তদাররা জানান, সরকার এ বছর ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। কিন্তু আড়তদাররা এই দামে কিনতে পারবেন না। কারণ তারা লবণ ছাড়া চামড়া কেনেন। এরপর লবণের দাম, শ্রমিকের মজুরি, গুদাম ভাড়া, এক চতুর্থাংশ নষ্ট চামড়া বাতিল হিসেবে ধরলে প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণ ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৫০০ টাকা। এ টাকা বাদ দিয়ে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বিষয়টি মাথায় রেখে কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। গত বছর চট্টগ্রামের আড়তদাররা আকারভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় গরুর লবণবিহীন চামড়া কিনেছিলেন।