চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এতে শতশত মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। এদের কেউ নিজের কষ্টে উপার্জিত টাকায় তৈরি থাকার ঘরটুকু হারিয়ে ফেলছেন। কেউ আবার ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পরিচালনা করা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি হারিয়ে ফেলছেন। আছে মৃত্যুর ঘটনাও। এসব আগুন লাগার পেছনে অনেক ধরনের কারণ থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে দেখা যাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ৬৮ দিনে চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন জেলায় অর্ধশতাধিক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিনেই আগুন লাগার ঘটনা আছে। এর মধ্যে কেবল চলতি মার্চেই সাতটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর পাঁচটি ঘটেছে আবার গত শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুরের মধ্যে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত এক শিশুসহ তিনজনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এসব আগুনের বেশির ভাগই সূত্রপাত হয়েছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট ও বিভিন্ন গোলযোগ থেকে। এ ছাড়াও রান্নার চুলা, সিগারেটের আগুন থেকে আগুন ছড়িয়েছে কিছু ঘটনায়। কিছু ক্ষেত্রে আগুন লাগার কারণ শেষ পর্যন্ত জানা যায়নি। আবার শত্রুতার জেরে আগুন লাগানোরও কিছু অভিযোগ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার মধ্যে রয়েছে শতাধিক দোকান, বসতঘর, গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য কারখানা ও বিপণিবিতান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেড়ে যায়। এ সময় বৃষ্টি না থাকা এবং নিয়মিত রোদের কারণে আধা পাকা বাড়ির অবকাঠামো শুকিয়ে থাকে। ফলে সামান্য ফুলকি থেকেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বৈদ্যুতিক তারে লুজ কানেকশন, লোডিং ক্যাপাসিটির অসামঞ্জস্যতা, নিম্নমানের তার ব্যবহারসহ নানা কারণে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হয়। এ সময় যদি বৈদ্যুতিক তারে আগুনের ফুলকি আসে তাহলে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ সব সময় চলাচলের পথ খুঁজে। এ কারণে বিদ্যুতের প্রবাহ সীমাহীন হলে অনেক সময় তাপমাত্রা বেড়ে আগুন লেগে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকালের মধ্যে পাঁচটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অর্ধশতাধিক দোকান, বসতঘর ও গুদাম পুড়ে গেছে। এসব ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক শিক্ষার্থীর। কমবেশি আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এর মধ্যে শনিবার ফটিকছড়ির শান্তিরহাট বাজারে আগুনে ৩০টি দোকান ও বসতঘর পুড়ে যায়।
এই অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন শেখ আহমদ জানান, আগুনে তার ২০টি দোকান পুড়ে গেছে। দোকানগুলো পুনরায় নির্মাণে তার বিপুল অর্থের দরকার। কিন্তু এ মুহূর্তে তিনি সেই টাকা জোগাড় করতেও পারছেন না। এতে তার আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আর যারা দোকানগুলোতে ব্যবসা করতেন তারাও নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
একই দিন পটিয়ার নাইখাইন গ্রামে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লাগা আগুনে ২২টি কাঁচা বসতঘর সম্পূর্ণ ছাই হয়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুন থেকে রেহাই পেতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট রোধে সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। সামান্য খরচ বাঁচাতে অনেকে নিম্নমানের তার ব্যবহার করেন। ফলে সর্বস্ব পুড়ে যায়।