বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, নবীজীর জীবনাদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সত্যিকার পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেককে সীরাত ও সুন্নাতকে নিজেদের জীবনে কার্যকর করার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
রবিবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ-সব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সীরাতে রাসুল (সা.) এক কালজয়ী আদর্শ। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শের আলোকে সমগ্র পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল, জাহিলিয়াতের অন্ধকার দূর হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকের যুগে আমরা বাইরের আচার-আচরণ ও বাহ্যিক জ্ঞানার্জনে যতটা মনোযোগী, অন্তরের চালচলন ও জীবনধারায় সীরাত ও সুন্নাতের প্রভাব ততটা প্রতিফলিত হচ্ছে না।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, রাসুল (সা.)-এর জীবন বিধান ও দিকনির্দেশনা আধুনিক যুগেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আল-কোরআনের আলোকে প্রণীত পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান, নারীর অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠা, বর্ণ ও জাতিগত বৈষম্য নিরসন, উত্তরাধিকার আইন, নারী শিক্ষা—এসব ক্ষেত্রেই নবীজীর দিকনির্দেশনায় সেই সময়েও আধুনিকতার ছোঁয়া বিদ্যমান ছিল।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, আজকের এই আয়োজন কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক মহৎ শিক্ষামূলক উদ্যোগ। এ অনুষ্ঠান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনে পৃথিবী কিভাবে আলোকিত হয়েছিল। তাঁর জীবনাদর্শ ও চরিত্র থেকে আমরা কতটা শিক্ষা গ্রহণ করছি এবং কতটা তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হচ্ছি—এই আয়োজন তারই প্রতিফলন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন-এর সভাপতিত্বে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. শেখ গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান এবং জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মোশাররাফ হোসেন।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি আব্দুল মুনয়িম খাঁন তাঁর আলোচনায় রাসুল (সা.)-এর সীরাত নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন। তিনি নবী করিম (সা.)-এর জীবনাদর্শ, সাহাবীগণের আমল এবং তাঁদের জীবন বার্তা নিয়ে সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেককে রাসুল (সা.)-কে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে এবং তাঁর আদর্শকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এবারই প্রথম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহৎ আয়োজনে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন করেছে। এর আগে গত সপ্তাহে জবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির আয়োজনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। কিরাত, নাতে রাসুল (সা.), রচনা, ইসলামিক ক্যালিওগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রতিটি ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণের পর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ জোহর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন