৩৮ বছর পর ফিরছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে জগন্নাথ কলেজে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৮ অক্টোবর থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর ১৮ অক্টোবর তফসিল ঘোষণা করা হবে। সবশেষ ভোট গ্রহণ হবে ২৭ নভেম্বর।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভোটার তালিকা প্রকাশ, সংশোধন, মনোনয়নপত্র জমা ও যাচাই- সব ধাপ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। গত ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত খসড়া সংবিধি অনুযায়ী, সব নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। তবে প্রফেশনাল কোর্সে অধ্যয়নরত, বিশেষ ডিগ্রিধারী বা অন্য প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত শিক্ষার্থীরা জকসুর আওতাভুক্ত হবেন না।
জকসুর উদ্দেশ্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ জাতীয় আন্দোলনের চেতনা ধারণ ও প্রচার, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, নেতৃত্ব বিকাশ ও মুক্তচিন্তার প্রসারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাহী কমিটিতে থাকবেন ২১ জন সদস্য- যার সভাপতি হবেন উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ হবেন পদাধিকারবলে। বাকি ১৯টি পদে সরাসরি নির্বাচন হবে। পাশাপাশি প্রতিটি হলে ১৭ সদস্যের হল সংসদ গঠনের বিধানও সংবিধিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জকসু নির্বাচনের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এ নির্বাচনকে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের মতামতে নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও জকসু নির্বাচনের প্রত্যাবর্তনকে গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ হিসেবে দেখছেন এবং শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছেন।
জকসু কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদে যেসব পদে নির্বাচন করা যাবে- সহ - সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ক সম্পাদক, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক, সাহিত্য, প্রকাশনা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক, পাঠাগার ও সেমিনার বিষয়ক সম্পাদক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, এবং সদস্য পদে পাঁচটি সহ সর্বমোট ১৮টি।
জকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন তাদের মতামত। এ বিষয়ে জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ছাত্রদল সবসময়ই ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার আদায়ে বদ্ধ পরিকর। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিক উন্নয়নে এবং আগামী তরুণ নেতৃত্ব বিকাশে অবশ্যই নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে। দীর্ঘদিন পর হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে এটা অনেক খুশির খবর।
জকসু নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনেরাল আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, আমরা স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চাই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেব। শুধু প্রচলিত সমস্যার সমাধান নয় বরং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও আলাদা উদ্যোগের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক, সৃজনশীল ও দেশসেরা ক্যাম্পাসে রূপান্তর করতে আমরা কাজ করব।
জকসু নিয়ে জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান রাব্বি হাসান বলেন, দীর্ঘ ৩৮ বছর পরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন যা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। যতটা আমেজ রয়েছে তার চেয়ে বেশি রয়েছে দায়িত্ব। এ ছাত্র সংসদের মাধ্যমে হবে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি। আশাকরি জবিয়ানরা নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সেই প্রতিনিধি খুজে পাবে। এই নির্বাচন প্রায় সকলের জন্য প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগের নির্বাচন হবে।
জকসু নিয়ে সর্তক করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীন বলেন, দীর্ঘদিন পরে জকসু হবে এটি সকলের জন্য আনন্দের বিষয় কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রবল সংকটে আক্রান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন জায়গায় একটি নির্বাচিত ছাত্র সংসদ বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি আরও বলেন, ক্যাফেটেরিয়া সংকট, বাথরুম সংকট, কমনরুম সংকট, লিফট সংকট, গবেষণায় ফান্ডিং সংকট, বিল্ডিংয়ের ছাদ ধ্বসে পড়ার মতো বহু সংকট নিয়ে কাজ করার জন্যে আমাদের কিছু যোগ্য ও নির্বাচিত প্রতিনিধি দরকার। সেই প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যেন শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারে সে বিষয়ে সকলে প্রহরীর মতো অবস্থান নিতে হবে।
জকসু নিয়ে বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, জকসু শুধু একটি নির্বাচন নয় এটি হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের এক সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। আমরা বিশ্বাস করি জকসুর মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। এর ফলে প্রশাসনে গড়ে উঠবে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি, যা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ।
জকসু নিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সুনিয়া বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ হিসেবে ৩৮ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে জকসু নির্বাচন। ক্যাম্পাসে বইছে নির্বাচনের আমেজ আর রাজনৈতিক আলোচনা। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীদের আশার প্রতিফলন ঘটবে। জকসুর প্রত্যাবর্তন হোক নতুন দিগন্তের সূচনা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ