বাংলাদেশের সমর্থকরা উল্লাস করেই চলেছেন। শ্রীলঙ্কার করা ১৬৮ রান স্পর্শ করেছেন লিটনরা। আর মাত্র একটা রান হলেই জয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সমর্থকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দর্শকরা উল্লাস থামিয়ে উইকেটের দিকে তাকান। সেখানে দসুন শানাকা বোল্ড করেছেন জাকের আলিকে। পরের বলে ডট। শেষ ওভারের চতুর্থ বলে শেখ মেহেদির উইকেটটাও শিকার করলেন শানাকা। দুই বলে ১ রান। হবে তো? নাসুম আহমেদ উইকেটে এসে কোনো দেরি করেননি। একটা রান নিয়ে জয় উপহার দেন বাংলাদেশকে। মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি। সুপারফোরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা ১৬৮ রান করে ৭ উইকেটে। ১৯.৫ ওভার খেলে ১৬৯ রান করে জয় তুলে নিয়েছেন লিটন দাসরা।
প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কান ব্যাটাররা বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন। পাথুম নিসানকা আর কুশল মেন্ডিস ব্যাট হাতে তা বই শুরু করেন। চার আর ছক্কার ফুলঝুরিতে দ্রুত গতিতে রান তুলতে শুরু করেন লঙ্কান দুই ওপেনার। তাসকিন আহমেদের হাতে বল তুলে দিতেই নিসানকা ঝড় থেমে যায়। ১৫ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কার মারে ২২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। তাসকিনের বলে ক্যাচ দেন সাইফ হাসানকে। এরপর কুশল মেন্ডিসের উইকেট শিকার করেন শেখ মেহেদি। কুশল ২৫ বলে ৩৪ রান করেন ১টি চার ও ৩টি ছক্কার মারে। এরপর কামিল মিসারা ১১ বলে ৫ ও কুশল পেরেরা ১৬ বলে ১৬ রান করে আউট হলে লঙ্কানরা বেশ সংকটেই পড়ে যায়। পেরেরার উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। কামিল মিসারাকে সাজঘরে ফেরান শেখ মেহেদি। লঙ্কান ইনিংসকে বড় করার পথে এগিয়ে নেন দাসুন শানাকা। তিনি ৩৭ বলে ৬৪ রান করেন ৩টি চার ও ৬টি ছক্কার মারে। চারিথ আশালঙ্কা ১২ বলে ২১ রান করে লড়াকু স্কোর গড়েন। শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান সংগ্রহ করে। শেষদিকে লঙ্কানদের রানের গতি থামান মুস্তাফিজ। তিনি ১৭ ও ১৯ নম্বর ওভারে বোলিং করেন। ১৭ নম্বর ওভারে ৬ রান দেন। ১৯ নম্বর ওভারে ৫ রান দিয়ে তিনজন লঙ্কান ব্যাটারকে সাজঘরে পাঠান। একটি রানআউট ও দুটি ক্যাচ। মুস্তাফিজ মোট ২০ রান দিয়ে শিকার করেন ৩ উইকেট।
শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া লক্ষ্যটা অনেকটা হেসেখেলেই পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। শেষ ওভারের আগে কখনোই কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দেয়নি। সাইফ হাসান ৪৫ বলে ৬১ রান করে দলের ভিতটা মজবুত করে যান। তানজিদ প্রথম ওভারে শূন্য রানে আউট হলেও অধিনায়ক লিটন দাস করেন ১৬ বলে ২৩ রান। এরপর তাওহিদ হৃদয় ৩৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। শেষদিকে শামীম ১৪ ও জাকের আলি ৯ রান করেন। জয়সূচক রানটা করেন নাসুম আহমেদ। এ জয়ে দারুণ এক প্রতিশোধই নিয়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে এই শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেই অনিশ্চয়তায় পড়েছিলেন লিটনরা। তাছাড়া ২০২২ সালে দুবাইয়ের এই মাঠেই এশিয়া কাপে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই পরাজয়েরও মোক্ষম প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে টাইগাররা।
সুপার ফোরে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াও খেলছে ভারত ও পাকিস্তান। এ গ্রুপে টানা তিন ম্যাচ জিতে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে ভারত। পাকিস্তান তিন ম্যাচের দুটিতে জিতলেও হেরেছে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে। আজ সেই ভারতেরই মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের মুখোমুখি হবে। এরপরের দিনই খেলবে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সুপার ফোর থেকে ফাইনাল খেলতে হলে অন্তত দুটি ম্যাচ জিততে হবে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এবার ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোনো একটা জিতলেই চতুর্থবারের মতো ফাইনাল খেলতে পারে!