শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) দিন দিন বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা। ক্যাম্পাসের ভেতরে ও আশপাশে প্রায়শই ঘটছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দিনে কিংবা সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে চলাফেরার সময় বারবার মোবাইল, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও হোস্টেল বা আবাসিক এলাকাতেও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা এখন নিত্তনৈমিত্তিক। তবে ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা না থাকায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ভুগছেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা নেই। যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলোই সঠিকভাবে কাজ করছে না বা প্রয়োজনীয় স্থানে বসানো হয়নি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গলি, প্রবেশদ্বার এবং ছাত্রাবাস এলাকায় নজরদারির ঘাটতি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। রাতে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তাঁদের তৎপরতা যথেষ্ট নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে অপরাধীরা সুযোগ বুঝে অবাধে অপরাধ সংঘটিত করছে।
জানা যয়, গত ১৬ মে ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের শিকার হন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর ফোন নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। তখন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চিৎকার করলেও আশেপাশে কোনো নিরাপত্তারক্ষী বা কাউকে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে যোগাযোগ করলে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরা সচল নেই বলে জানানো হয়।
আজ রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় মেয়েদের আবাসিক হলের রাস্তায় নারী শিক্ষার্থীর মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এক ছিনতাইকারী। এই ঘটনায় ঐ নারী শিক্ষার্থী প্রক্টর অফিসে গিয়ে সিসি টিভি ফুটেজ চেক করতে গেলে জানানো হয় ঘটনাস্থলের আশেপাশে ক্যামেরা নেই। ছিনতাইকারীর চেহারা সনাক্ত না হওয়ায় কিছু করা যাবে না বলেও জানানো হয়। এর আগেও গত মাসে মেয়েদের আবাসিক হলের রাস্তায় এক নারী শিক্ষার্থীর পিছু নেয় এক বহিরাগত। কিছুক্ষণ পর ঐ নারী শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসব ঘটনায় সিসি ক্যামেরার অপর্যাপ্ততা এবং নিরাপত্তকর্মীদের তৎপরতা নিয়েও ক্ষোভ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এমনকি ক্যাম্পাসের আশেপাশে আবাসিক এলাকাতেও বিগত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, গত মাসে শাবিপ্রবির গেইট সংলগ্ন একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে এক নারী শিক্ষার্থীর টাকা, পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি হয়ে যায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়াবাজার সংলগ্ন কোয়ার্টার থেকে বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গত তিন মাসে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটে।
ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের তৎপরতায় মাদকের চালানও বাড়ছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর সেন্টার অব এক্সেলেন্স ভবনের পেছনে গাঁজার আসর থেকে বহিরাগত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষায় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সিসি ক্যামেরা বাড়ানো, নিরাপত্তারক্ষীদের টহল জোরদার করা এবং বহিরাগত লোকজনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর প্রদক্ষেপ নিতে হবে।
ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী সানজিদা আহমেদ তমা বলেন, ‘আজ সকাল ৯টায় হল থেকে গোলচত্বর রোডে এক ছেলে আমার হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি রোডের প্রায় মাঝ বরাবর ছিলাম। ছিনতাইকারী দৌঁড়ে চলে যায় ফার্স্ট হলের রোডের দিকে। এরপর প্রক্টর অফিসে গিয়ে ফুটেজ চেক করতে গিয়ে দেখি ওই রোড, গোলচত্বর রোডের জয়েন্ট, ডি এক্সটেনশনের পাশে কোথাও ক্যামেরা নেই। ছিনতাইকারীর চেহারা না চেনায় এখন কিছু করা যাবে না। এজন্য অফিস থেকে একজন বলছেন সাবধানে থাকার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ক্যামেরা নেই। টিচার্স কোয়ার্টারের পাশে রাস্তার ক্যামেরা নষ্ট। এটি ভালো থাকলে ছিনতাইকারী সনাক্ত করা সম্ভব হতো।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘মাঝে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কারণে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা অচল ছিল। বর্তমানে সচল রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহিরাতগত নিয়ন্ত্রণে আমরা দক্ষ টিম গঠন করছি। প্রক্রিয়াটি চলমান। আশাকরি শিগগিরই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ