আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ২০২৫ এ সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ও জাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ৮ দিন পর আজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাকসু নির্বাচনে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের হয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ছিলেন অমর্ত্য রায় জন।
নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জন, রেজি নং-৪৬৯৮৪, আ ফ ম কামালউদ্দিন হল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) এর গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা মোতাবেক ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ভোটার ও প্রার্থী তালিকা হতে তার নাম প্রত্যাহার করা হলো।"
ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম, সদস্য অধ্যাপক এম মাফরুহী সাত্তার ও অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী। তবে কমিশনের আরেক সদস্য অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা এতে স্বাক্ষর করেননি। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অসুস্থ থাকায় আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম না, তাই স্বাক্ষর করতে পারিনি।’
নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানায়, গত ১৭ আগস্ট প্রকাশিত জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৫ আগস্টের খসড়া প্রার্থী তালিকা এবং ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে ভিপি হিসেবে অমর্ত্য রায়ের নাম ছিল। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ৮ দিন পর আজ তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম বলেন, “সকালে সিন্ডিকেট থেকে জানানো হয়েছে যে অমর্ত্য নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। জাকসু সংবিধান অনুযায়ী অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারেন না। তাই তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।”
কেন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ৮ দিন পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আজ সিন্ডিকেট থেকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের কোনো সদস্যকে জিজ্ঞেস করুন।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, গত বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত হয়। অমর্ত্য ১১ আগস্ট যখন মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করেন, তখন একাডেমিক কাউন্সিল ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর দেখতে পায় তিনি স্নাতক ডিগ্রি শেষ করতে পারেননি। স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা ৪০৮ নম্বর কোর্সে দুই বার অকৃতকার্য হয়েছেন। একাডেমিক কাউন্সিল তাকে বিশেষ বিবেচনায় বিশেষ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এ ধরনের শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত ধরা হয়। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি।
নির্বাচনী গঠনতন্ত্রের ৪ ধারায় বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মিত ও বৈধ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-সংসদের সদস্য বলে গণ্য হবেন। কেবল তারাই ভোটার বলে বিবেচিত হবেন এবং শিক্ষার্থী সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে শর্তাবলি হচ্ছে, যে সকল শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ৬ (৪+২) বছর এবং/অথবা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ২ (১+১) বছর ধরে অধ্যয়ন করছেন, কেবল সে সকল শিক্ষার্থীর নাম জাকসু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রের ৮ ধারায় উল্লেখ আছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করা সাপেক্ষে সংসদে ও যেকোনো নিয়মিত সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট প্রদান করতে পারবেন।
প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে অমর্ত্য রায় জন বলেন, “আমি প্যানেলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করব। যা-ই হোক, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হবে বলে আশা করি।”
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন