জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে বিয়ের আগের দিন ক্যাম্পাসে আটক করে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় তাকে আটক করে পুলিশ দেয়া হয়।
আটক ছাত্রলীগ নেতার নাম শরিফুল ইসলাম সাজিদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিভাগের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের ব্যাংকপাড়া এলাকায়।
এর আগে দুপুর দেড়টার নিজ বিভাগে রিটেক পরীক্ষার আবেদন করার জন্য আসেন। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাকে আটক করেন। আটকের সময় তার সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এরপর তাকে প্রক্টর অফিসে হস্তান্তর করেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
আটকের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান সজীব বলেন, আমরা জানতে পারি সেই আজ ক্যাম্পাসে এসেছে। এরপরই তার বিভাগে গিয়ে তাকে আটকের সময় আমাদের সঙ্গে সাজিদ ও তার কয়েকজন সহপাঠীর ধস্তাধস্তি হয়। আমরা তাকে কোনো আঘাত করেনি বরং সুন্দর করে ধরে নিয়ে এসে প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।
ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘সাজিদ ইসলাম’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে লেখা হয়- ‘কাল থেকে একদল তরুণের প্রবেশ হবে যাদের হারানোর কিছুই নেই, না একটা গোছানো রুম, না সম্মান, না বন্ধু, না কোনো আপনজন, না সার্টিফিকেট। কিছুই নেই, নেই ভয়, নেই লজ্জা, নেই আবেগ, নেই দরদ। তারা হবে নির্ভীক, তারা হবে ভয়ংকর সুন্দর!’
এ অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে আটক ছাত্রলীগ নেতা সাজিদ বলেন, আইডিটি আমার নয়। আমি এমন কোনো পোস্ট দেয়নি। আগামীকাল আমার বিয়ে, তাই আগামী সপ্তাহে আসতে পারবো না বলে আজ রিটকে পরীক্ষার আবেদন করতে এসেছি। আমি কয়েকদিন আগে সূত্রাপুর থানায় একটি মামলায় আটক হয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জামিনে মুক্তি পাই।
প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা যায়, সাজিদকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আটকের পর তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও কর্মরত এক গণমাধ্যমকর্মী লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ০৯/০২/২০২৩ সালের রাত ১০টায় শহীদ সাজিদ ভবনের সামনে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম সাজিদের নেতৃত্বে ১৭তম ব্যাচের ১২-১৫ জন আমাদের উপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা করে। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ ৮ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। ওই সময় প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমরা অভিযোগ দিতে পারিনি। এখন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, সেই আমাকে সহ আমার বিভাগের কয়েকজন সহপাঠীকে তুচ্ছ ঘটনায় মেরেছে। তার ভিডিও এখনো আমার কাছে আছে। এজন্য আমি বিচারের জন্য অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসলে আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখেছি। তারা বলেছেন, 'তার নামে মামলা রয়েছে এজন্য তাকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করেছি।'
আটক ছাত্রলীগ নেতার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রক্টর অফিস সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আমরা আটক করে নিয়ে এসেছি। আগামীকাল তাকে আদালতে তোলা হবে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় মামলা রয়েছে জানতে পেরেছি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত