বসুন্ধরা শুভসংঘ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ব্যতিক্রমধর্মী এক পাঠের আসরের আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে এক মনোরম পরিবেশে এই পাঠের আসরের আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে পাঠ করা হয় দেশের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের লেখা প্রখ্যাত উপন্যাস ‘চর কাজলির মানুষ’।
বইটি পাঠ শেষে অংশগ্রহণকারীরা এর ভাষা, প্রেক্ষাপট, চরিত্র ও সমাজচিত্র নিয়ে আলোচনা করেন। সাহিত্য নিয়ে ভাবনার পাশাপাশি উঠে আসে মানবিকতা, গ্রামীণ জীবনের সংগ্রাম ও প্রেম-ভালোবাসার মতো আবেগঘন বিষয়।
পাঠের আসরের প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সাহিত্যবিষয়ক সংগঠন ‘চিত্তনামা’র সভাপতি মারুফ শেখ। তিনি বলেন, ইমদাদুল হক মিলনের ‘চর কাজলির মানুষ’ উপন্যাসটি শুধু একটি কাহিনি নয়, এটি বাংলাদেশের চরাঞ্চলের বাস্তব জীবনের একটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। বইটি পড়ে আমি অভিভূত হয়েছি। চরবাসীর কঠোর সংগ্রাম, ভালোবাসা, বঞ্চনা এবং মানবিক টানাপোড়েন যেন প্রতিটি পাতায় উঠে এসেছে। এমন সাহিত্য আমাদের তরুণদের মানসিকভাবে আরও সংবেদনশীল ও মানবিক করে তুলতে পারে। আমি মনে করি, এমন আয়োজন নিয়মিত হলে পাঠাভ্যাস যেমন বাড়বে, তেমনি সাহিত্য নিয়ে গভীর আলোচনা-চিন্তাও গড়ে উঠবে। বইয়ের ছায়ায় নয়, বইয়ের আলোয় গড়ে উঠুক নতুন প্রজন্ম।
আসরের আয়োজক শুভসংঘের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য বায়েজিদ আহমেদ বলেন, আমরা চাই, পাঠচর্চা শুধু ক্লাসরুমেই সীমাবদ্ধ না থেকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে হোক, মননশীল আলোচনার মধ্য দিয়ে।
পাঠচক্রে অংশগ্রহণকারী ২০২১-২২ বর্ষের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বিথী আক্তার কাজল বলেন, বইটি পড়ার পর আমি সত্যিই ভাবনায় পড়ে গেছি। চরাঞ্চলের মানুষদের জীবন কতটা কঠিন ও সংগ্রামী হতে পারে, তা বইটি না পড়লে এভাবে বুঝতে পারতাম না। চর এলাকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দরিদ্রতা আর মানুষের সহজ-সরল জীবনের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা আমার হৃদয়কে ছুঁয়ে গেছে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, পাঠচর্চা শুধু ক্লাসরুমে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বরং তা প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে হলে পাঠে মনোযোগ ও আনন্দ দুটোই বাড়ে। ‘গাছের ছায়ায় পাঠের আসর’ ছিল আমাদের এমনই একটি প্রয়াস, যেখানে শিক্ষার্থীরা বই পড়ে নিজের মতো করে ভাবতে পারে এবং তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে। আমরা চাই, তরুণরা বইয়ের প্রতি আগ্রহী হোক, সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত হোক এবং মানবিক মূল্যবোধে গড়ে উঠুক। এই আয়োজন সামনে আরও বড় পরিসরে চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই