রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শরিফুজ্জামান নোমানী হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটক থেকে বিক্ষোভ নিয়ে বিনোদপুর বাজারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি হাফেজ নুরুজ্জামান বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতায় আসে। সেই লক্ষ্য অর্জনে সর্বপ্রথম শিবিরকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। সেটারই দৃষ্টান্ত ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী নোমানী হত্যা। শুধু নোমানী নয়, এমন অসংখ্য ভাইকে তারা বিনাবিচারে হত্যা করেছে। শাপলাচত্বরে হত্যাযজ্ঞসহ জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে। কোনো হত্যার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। আজকে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও নোমানী হত্যার সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন হচ্ছে না। অবিলম্বে এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের কর্মী, সাথী ও সদস্যসহ অনেক দায়িত্বশীলকে হত্যার পরও ক্ষান্ত হয়নি, তৎকালীন শাখা সেক্রেটারি নোমানী ভাইকেও নৃসংশভাবে হত্যা করেছিল। তারা হত্যার রাজনীতি করে শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা দ্বিগুণ হয়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। অন্যদিকে তারাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার নোমানী ভাইয়ের হত্যাকারীকে বাঁচাতে মামলা খারজি করে দিয়েছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় সেই নৃশংস হত্যার পুনর্বিচার চাই।
শাখা শিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সালের সঞ্চালনায় সমাবেশে ক্যাম্পাস ও মহানগর শাখার পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
এর আগে, ২০০৯ সালের ১১ মার্চ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিবিরের পথসভা চলাকালে ছাত্রলীগের একটি মিছিল মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করতে চাইলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আরম্ভ হয়। পরে হলগুলোতে উত্তেজনা দেখা দেয়। ১২ ও ১৩ মার্চ হলগুলোতে নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান চালায় ছাত্রলীগ। ১৩ মার্চ শেরে বাংলা হলে নোমানীকে হত্যা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন মুন ও আওয়ামী লীগ নেতা আনারসহ ২৭ জনের নামে মামলা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিবিরের ফরহাদ আলমকে শের-ই-বাংলা হলের পশ্চিম-৬ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে পূর্ব-১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে ছাত্রলীগের আওয়াল কবির জয় ও আওয়ামী লীগের আনার অন্য শিবির কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। খবর পেয়ে সাড়ে ১১টার দিকে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক নোমানী, কর্মী মাহবুব, আবু রায়হান, শফিকুল ইসলাম, জিন্নাহ ও আশরাফ তাদের উদ্ধার করতে আসেন। তখন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের টেনে-হিচড়ে হলের পূর্ব দিকে নিয়ে যায়। এ সময় জয় ওদের খুন করার নির্দেশ দেন। এরপর রনি ও দ্বীপ নোমানীর ওপর হামলা চালায়। দ্বীপ চাপাতি দিয়ে তার মাথায় কোপ দেয়। নোমানী ডান হাত দিয়ে আঘাত ঠেকানোর চেষ্টা করলে তার হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক পর্যায়ে নোমানী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অন্য আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে বাদীসহ অন্যরা পালিয়ে যান। ২০১৩ সালে এ মামলার সকল আসামি খালাস পায়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই