রাত নামলেই সড়কবাতির মনোমুগ্ধকর আলোয় ঝলমল করে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন সড়ক। রাতের নিস্তব্ধতায় এতে মুগ্ধ হন পথচারী, ভ্রমণপিপাসু ও সৌন্দর্যপ্রেমীরা। ‘আলোর শহর রাজশাহী’ বলে প্রশংসা করেন নগর ব্যবস্থাপনাকে। তবে এ আলো নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবাদীরা। তাদের দাবি, অপরিকল্পিত আলোকায়নে রাজশাহীতে হচ্ছে ‘আলো দূষণ’।
প্রকৃতি ও প্রাণী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে পরিযায়ী পাখিরা প্রাকৃতিকভাবে রাতের তারা বা চাঁদের আলোয় পথ অনুসরণ করে চলাফেরা করে। রাজশাহী শহরের অতিরিক্ত আলোর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না নিশাচর প্রাণী ও পরিযায়ী পাখিরা। বিশেষ করে ঊর্ধ্বমুখী বাতির আলো তাদের গতিপথ বদলে দিচ্ছে। ফলে শহর তো বটেই, শহরলাগোয়া পদ্মার পাড় এমনকি নদীর চরেও কমে যাচ্ছে নিশাচর প্রাণী ও পরিযায়ী পাখির আনাগোনা। তাদের মধ্যে আছে বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা, বাদুড়, পানকৌড়ি, শালিক, সানবার্ড, চখাচখিসহ নানা জাতের পাখি। ঊর্ধ্বমুখী আলোয় দিশাহারা তারা। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রকৌশল শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কেই দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে শহরের কাশিয়াডাঙ্গা মোড় থেকে বিলশিমলা রেলক্রসিং পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কটিতে ১৭৪টি দৃষ্টিনন্দন পোলে বসানো হয়েছে ৩৪৮টি আধুনিক এলইডি বাতি।
উপশহর মোড় থেকে দড়িখরবোনা, কাদিরগঞ্জ, মহিলা কলেজ, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে সোনাদিঘী মোড় এবং মালোপাড়া মোড় থেকে রানীবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে মোট ৯৬টি ডেকোরেটিভ পোলে ৯৬টি দৃষ্টিনন্দন এলইডি সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। আলিফ লাম মিম ভাটার মোড় থেকে নাদের হাজির মোড় পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের আইল্যান্ডে ৮৭টি পোলে বসেছে ১৭৪টি অত্যাধুনিক এলইডি বাল্ব। বন্ধ গেট থেকে সিটিহাট পর্যন্ত সড়কে বসেছে ২১৮টি এলইডি বাতি।
সবচেয়ে ক্ষতি করছে শহরের কল্পনা সিনেমা হলের মোড় (স্বচ্ছ টাওয়ার) থেকে তালাইমারী এবং তালাইমারী থেকে ভদ্রা হয়ে রেলগেট ও সাহেববাজার থেকে কোর্ট এলাকা পর্যন্ত সড়কে থাকা অসংখ্য নান্দনিক সড়কবাতি ‘রাজমুকুট’।
অতি উচ্চ রোশনাই সমৃদ্ধ এসব আলোর কারণে পাখি ও নিশাচর প্রাণীর সংখ্যা কমছে বলে জানান পাখিপ্রেমী হাসনাত রনি। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ সময় পাখি নিয়ে কাজ করছি। গত কয়েক বছরে ঊর্ধ্বমুখী আলো দূষণের কারণে পাখির সংখ্যা অনেক কমে যাচ্ছে। বক, নিশিবক, পানকৌড়ি, পেঁচা এরা রাতে ওড়াওড়ি করে। এদের চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট গতিপথ আছে। কিন্তু আলো দূষণের কারণে তারা দিকভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনধারা ক্রমান্বয়ে বদলে যাচ্ছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ আল মইন পরাগ বলেন, ‘নিশাচর প্রাণী কমছে এটা ঠিক। আমরা জেনেছি এবং শুনেছি। শব্দদূষণের মতো আলো দূষণ বলেও একটি শব্দ আছে। আলো দূষণের কারণে নিশাচর প্রাণী কমছে বলে অনেকে মনে করেন। এখনো কোনো পরিবেশবাদী সংগঠন আমাদের অভিযোগ করেনি। যদি করে তবে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবব।’