রাজধানীর বাস টার্মিনাল ঘিরে যানজট নিত্যচিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সামনে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয় যাত্রীদের। টার্মিনালে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাইরের রাস্তায় রাখা থাকে বাস। দিনের পর দিন এ অবস্থা চললেও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। অগ্রগতি নেই রাজধানীর বাইরে তিন টার্মিনাল সরানোর প্রকল্পেরও।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টার্র্মিনালের সক্ষমতার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বাসের পারমিট দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মহাখালী টার্মিনালের সামনে চালকরা বাস রেখে দেন। এর ফলে ওই টার্মিনালের সামনে তৈরি হয় যানজট। গাবতলী টার্মিনালের সামনে বাস রাখতে দেওয়া হয় না। ফলে যানজটও কমে এসেছে।’
সকাল ৯টায় মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালের বাইরের রাস্তার অর্ধেক দখল করে পার্কিং করে রাখা হয়েছে যাত্রীবাহী বাস। সাধারণত উত্তরাঞ্চল এবং ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর এসব রুটের বাসগুলো এ টার্মিনাল থেকে বেশি যাতায়াত করে। দুই পাশে বাস রাখায় রাস্তায় এক লেনে চলাচল করছে যানবাহন। এর মধ্যে টার্মিনাল থেকে বের হয়ে ইউটার্নে বাস ঘোরানোর জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন চালকরা। এতে মহাখালী থেকে তেজগাঁওগামী রাস্তায় তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। অফিসগামী যাত্রী একরামুল ইসলাম বলেন, মহাখালী টার্মিনালের সামনের যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিনিট দেরি হয়। দৈনিক একই ঘটনা ঘটলেও যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ, সিটি করপোরেশন কেউ-ই কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এ টার্মিনাল গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাবতলী টার্মিনালের বাইরে বাস রাখা না হলেও টেকনিক্যাল মোড়ে দীর্ঘসময় বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হয়। এর ফলে ওই রাস্তায় ভীষণ যানজট তৈরি না হলেও গাড়ির গতি কম থাকে। টেকনিক্যাল মোড় থেকে গাবতলী টার্মিনাল পর্যন্ত হালকা যানজট থাকায় ধীরে চলতে হয় বাসগুলোকে।
পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে যাত্রী পরিবহনও। সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ব্যবহার করে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি দূরপাল্লার বাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করে। সব মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার বাস চলাচল করে এ টার্মিনাল ঘিরে। বেশির ভাগ কোম্পানির বাস সড়কেই যাত্রী ওঠানামা করায়। টিকিট কাউন্টারও ভিতরের চেয়ে বাইরে বেশি। এতে টার্মিনালের সামনে ও আশপাশের সড়কগুলোয় সবসময় লেগে থাকে তীব্র যানজট।
সরেজমিন দেখা যায়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ধারণক্ষমতা ৮০০-এর মতো। তবে এর কয়েকগুণ বেশি বাস এ টার্মিনালকে কেন্দ্র করে চলাচল করে। টার্মিনালে জায়গা না পেয়ে আশপাশের সড়কে পার্কিং করে যাত্রী ওঠানামা করায় অনেক কোম্পানির বাস। কিছু কোম্পানির বাস টার্মিনালে পার্কিং করে রাখা হয়। ফলে টার্মিনালটি এখন কেবল বাস পার্কিংয়ের স্থানে পরিণত হয়েছে। ভিতরে থেকে খুবই কমসংখ্যক যাত্রী বাসে ওঠানামা করে। সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা ছাড়াও গাড়ি ঘোরানো, একই সড়ক দিয়ে অনিয়ন্ত্রিত রিকশা-সিএনজির মতো ছোট যানবাহন চলাচলের ফলে সায়েদাবাদ এলাকায় দিনরাত যানজট লেগেই থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে সবার।
এ যানজট কমাতে রাজধানীর বাইরে তিন আন্তজেলা বাস টার্মিনাল নেওয়ার কথা ছিল। সাভারের হেমায়েতপুর, হরিরামপুরের গ্রাম ভাটুলিয়া এবং কেরানীগঞ্জের বাঘাইরে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল করার কথা ছিল। সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল সরিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর সেতুর ওপারে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের জুনেই চালু হওয়ার কথা ছিল নতুন টার্মিনালটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে প্রায় ২৬ কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ সায়েদাবাদ থেকে টার্মিনাল কাঁচপুরে সরানো হবে কি না। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সরকার পরিবর্তনের পর। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে টার্মিনাল স্থানান্তরের কাজ থমকে আছে। অন্য দুই টার্মিনাল প্রকল্পেরও একই অবস্থা।