বিভিন্ন মানুষের বিচিত্র রকমের শখ থাকে। এদের মধ্যে কারো আবার শখটাই ভালোবাসায় পরিণত হয়। এরকম এক শখের বসে হাতের নখ রেখে ৩২ বছর ধরে আর কাটেননি। বরং কোন কারণে তার নখের অংশবিশেষ ভেঙে গেলে তিনি খুব কষ্ট পান। এরকম এক যুবক দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর অরুণ কুমার সরকার (৪০)। তিনি ভালোবাসার কারণে ৩৩ বছর ধরে নিজের হাতের নখ কাটেননি।
এখন তিনি নিজেই অন্যের কাছে হয়ে উঠেছেন দর্শনীয় বিষয়। ফুলবাড়ীর খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের উত্তর লক্ষ্মীপুর উচ্চ-বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে অরুণ কুমার সরকার।
১৯৯৩ সালে ৮ বছর বয়সে অরুণ কুমার সরকারি প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তখনই কয়েক সপ্তাহ নখ না কাটায় স্কুলে শিক্ষক তাকে নখ কাটার কথা বলেন। কিন্তু অরুণ তখন ভাবেন এই নখ আরো একটু বড় হলে কেমন লাগে দেখি। আর এভাবেই তার নখ বড় হতে থাকে।নখ বড় হওয়ার সাথে সাথে নখের প্রতি অরুণের ভালোবাসা জন্মায়। নখের প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি আর নখ কাটতে চাননি। বর্তমানে অরুণের বাঁম হাতের আঙুলগুলোর নখের দৈর্ঘ্য হলো অনামিকা ১৫ ইঞ্চি, কনিষ্ঠা ১৩ ইঞ্চি, মধ্যমা ১১ ইঞ্চি, তর্জনী ২ ইঞ্চি, বৃদ্ধাঙ্গুল-দেড় ইঞ্চি। অরুণের এই নখ দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী মানুষ ভিড় করে। কেউ কেউ ছবি তুলে নিয়ে যান।
স্থানীয়রা বললেন, অরুণ দীর্ঘদিন ধরে নখ রেখে আসছেন। দেখতে ভালোই লাগে। এটা সবার পক্ষে সম্ভব নয়, অনেক ধৈর্যের ব্যাপার। অরুণের বাবা মা ও আত্মীয় স্বজন তার নখ রাখার ব্যাপারে প্রথম প্রথমদিকে বাধা দিলেও পরে তারাও মেনে নেন।
অরুণ কুমার সরকার জানান, হাতে নখ রাখার ব্যাপারটা হঠাৎ শখের বসেই হয়েছে। তার তেমন কোনো সমস্যা হয় না। নখগুলোর প্রতি অনেক ভালোবাসা জন্মেছে। সে কারণে নখগুলো আর কখনো কাটতে ইচ্ছা করে না। তাই ভালোবাসার কারণেই নখগুলো কাটবেন না স্থির করেন। যদি কোন কারণে এই নখের কোনো অংশ একটু ভেঙ্গে যায়, তাতে খুব কষ্ট পান বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এইচএসসি পড়ার সময়ই ব্যবসাতে নেমে পড়ি। এরপর ২০০৩ সালে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর দুই সন্তান হয়। ফুলবাড়ীর লক্ষ্মীপুর বাজারে প্রথম কন্যা সন্তানের নামে কান্না ডিজিট্যাল ফটো স্টুডিওসহ একটি ফ্লাক্সিলোডের দোকান রয়েছে। সেখানে ছবি তোলা ও বিকাশ এর ব্যবসা করেই তার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন অরুণ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল