গণঅভ্যুত্থানে এমন কিছু আহত রয়েছেন, যাদের প্রত্যেক ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য সরকারের ১২ কোটি টাকা করে খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজনে ‘কেমন আছে জুলাই ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থানে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবার এবং আহত শ্রমিকেরা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে ভার্চুয়ালি সভা উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
ফারুক ই আজম বলেন, সরকার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে আহত ব্যক্তিরা প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। তারা এককালীন অনুদানও পেয়েছেন। আহতদের জন্য আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা সরকারের সব হাসপাতালে প্রযোজ্য হবে। এ উদ্দেশ্যে তাদের একটি হেলথ কার্ড দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে এবং দেশের সব বিশেষায়িত হাসপাতালে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যাদের দেশের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত মনে হয়নি, তাদেরকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৭৫ জনকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া এবং তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৩৪ জন এখনো থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন আছেন এবং তাদের সঙ্গে পরিবারের একজন সদস্যও রয়েছেন। এমন কিছু আহত রয়েছেন, যাদের প্রতিজনের চিকিৎসার জন্য সরকারের ১২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সেখানে অর্থ নয়; বরং চিকিৎসাসেবার মানই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।
উপদেষ্টা বলেন, কারা বিদেশে চিকিৎসা পাবেন বা কার কী ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন, তা বাংলাদেশের বিখ্যাত সরকারি ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড নির্ধারণ করে। এ বোর্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পুনর্বাসন) এর প্রয়োজনও নির্ণয় করে। তাছাড়া সরকার একটি বড় ধরনের পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আহত ব্যক্তিদের পছন্দ অনুযায়ী পুনর্বাসিত করা হবে।
জুলাইযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের পর তাদের যোগ্যতা ও চাহিদা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া হবে। সরকার জানিয়েছে যে, জুলাইযোদ্ধাদের কোটা দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ ২০২৪ সালের এ গণঅভ্যুত্থানটি নিজেই কোটার বিরুদ্ধে হয়েছিল। কেউ বেকার থাকবেন না এবং তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে।
জুলাইযোদ্ধাদের জন্য একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেখানে নিয়োজিত কর্মকর্তারা আহত ও নিহতদের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করবেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার এ ঘটনাকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এর নামকরণ কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী যেমন ছাত্র বা শ্রমিকদের নামে করা হয়নি, বরং এটি জনগণের সবার অংশগ্রহণে সংঘটিত হয়েছে।
সরকার এ ত্যাগের মহত্বকে তুলে ধরতে চায়, কারণ এটি জাতির স্পিরিটের সঙ্গে জড়িত। এ আত্মত্যাগ যেন যুগ যুগ ধরে আগামী প্রজন্মকে একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর রাষ্ট্র গঠনে অনুপ্রাণিত করে।
আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফারুক ই আজম বলেন, এ গণঅভ্যুত্থান একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে দেশের সব রাজনীতিবিদ এখন ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য এক টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। পুরো রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদ দিয়েও এ আহত ও শহীদদের ঋণ পরিশোধ করা যাবে না। তবে, তাদের পরিবার বংশ পরম্পরায় তাদের ত্যাগের এ গৌরব বহন করে নিয়ে যেতে পারবে, যা অবিস্মরণীয় থাকবে। লক্ষ্য হলো রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং শ্রমিক ব্যবস্থাপনার সব অসঙ্গতি ও অন্যায় দূর করে একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ দেশ, কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানে দরিদ্র অবস্থায় আছে। মন মানসিকতার পরিবর্তন হলে এটি একটি ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, স্কপের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদার ও ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ