গুগল ডিপমাইন্ডের তৈরি চ্যাটবট এআই ‘জেমিনি ডিপ থিংক’ চলতি মাসে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (IMO) প্রশ্নের সমাধান করে ‘স্বর্ণপদকের মান’ অর্জন করেছে। মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই ইংরেজিতে লেখা প্রশ্ন পড়ে এবং বুঝে ছয়টির মধ্যে পাঁচটি সমস্যা সমাধান করে এটি মানুষের মতো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।
গুগল জানিয়েছে, এটি কোনো কোডিং নয়, বরং সাধারণ ভাষায় চিন্তা করে সমাধান দেয়- এটাই প্রথমবারের মতো কোনো চ্যাটবটের এমন অর্জন।
এর আগে AI সিস্টেমগুলোতে প্রশ্নগুলোকে বিশেষ প্রোগ্রামিং ভাষায় রূপান্তর করতে হতো। গুগলের এই নতুন এআই সেই সীমা পেরিয়ে গেছে। এটি ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের যুক্তিভিত্তিক এআই সিস্টেম (reasoning system) ভবিষ্যতে গণিত, বিজ্ঞান ও প্রোগ্রামিংয়ের জটিল গবেষণা অনেক দ্রুত এবং সহজ করে তুলতে পারে।
গুগল ছাড়াও ওপেনএআই, অ্যানথ্রোপিক এবং চীনের ডিপসিকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমন সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে। তবে এই সাফল্যে গুগলের ‘জেমিনি ডিপ থিংক’ এখন যুক্তিপূর্ণ ও মানবসদৃশ এআইয়ের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
কী এই জেমিনি ডিপ থিংক?
জেমিনির বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে- যেমন ‘Gemini 2.5 Flash’, ‘Gemini 2.5 Pro’। তবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নতুন সংস্করণটির নাম Gemini Deep Think- নামেই বোঝা যায়, এটি গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে। সাধারণ চ্যাটবটের মতো তাড়াহুড়ো করে উত্তর না দিয়ে, সময় নিয়ে সমস্যার সবদিক বিশ্লেষণ করে সমাধান খোঁজে।
যেটা আগে কেউ পারেনি
এর আগেও কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিল। তবে তাদের সীমাবদ্ধতা ছিল- প্রশ্নগুলোকে আগে বিশেষ কম্পিউটার ভাষায় অনুবাদ করতে হতো। কিন্তু Gemini Deep Think ইংরেজিতে লেখা প্রশ্ন সরাসরি পড়ে ও সমাধান করতে পারে। এর জন্য মানুষের সাহায্য লাগে না।
এই সক্ষমতা অর্জনের জন্য গুগলকে বছরের পর বছর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে। সাধারণ এআই যেমন লেখালেখি বা অনুবাদে ভালো, তেমনটি গণিতে ছিল না। সেই দুর্বলতাই এখন কাটিয়ে উঠেছে Deep Think।
ওপেনএআইও সমানভাবে সক্ষম?
জেমিনির পাশাপাশি ওপেনএআই-এর একটি মডেলও নাকি একই পরীক্ষায় পাঁচটি সমস্যার সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে। তবে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়নি, তাই কোনো পদক পায়নি।
শুধু সাফল্যই নয়, চ্যালেঞ্জও আছে
এই অর্জন শুধু একটা পদক পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রমাণ করে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন শুধু তথ্য সংগ্রহের যন্ত্র নয়, বরং সৃজনশীল চিন্তাশক্তির অধিকারী সমস্যা সমাধানকারী হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানী ও প্রোগ্রামারদের গবেষণাকাজ এতে অনেক সহজ ও দ্রুততর হবে।
তবে এর সঙ্গে বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এত শক্তিশালী সিস্টেম চালাতে ব্যাপক বিদ্যুৎ ও খরচ লাগে। গুগল এই পরীক্ষায় কত খরচ হয়েছে তা জানায়নি, তবে ব্যয় যে অনেক, তা অনুমান করাই যায়।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ