এশিয়ান ক্লাব ফুটবলে আরেকটি আসর খেলে এলো বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস। কুয়েতে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্ব ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। চার দলের লড়াইয়ে তিন ম্যাচ হেরে শেষ পজিশনে থেকেই আসর শেষ করেছে কিংস। এএফসি কাপ ও চ্যালেঞ্জ লিগ মিলিয়ে বাংলাদেশের একমাত্র ক্লাব হিসেবে কিংসই টানা সাতবার আসরে অংশ নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর ঘরোয়া আসরে অসংখ্য ট্রফি জিতে ইতিহাস গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। যা ৭৯ বছর ঘরোয়া আসরে অন্য ক্লাবের এত দ্রুত শিরোপা জেতা সম্ভব হয়নি। টানা পাঁচবার লিগ, ফেডারেশন কাপ চার, স্বাধীনতা কাপ তিন ও চ্যালেঞ্জ কাপ দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আট মৌসুমে ১৩ ট্রফি জয় নিঃসন্দেহে তাদের গৌরবের।
এত ট্রফি অথচ এএফসি ফুটবলে বরাবরই হতাশায় ফ্রেমে বন্দি কিংস। এবার কাতারের মাটিতে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে জয়ী হয়ে গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও হ্যাটট্রিক হারেই বিদায়। গতবার ভুটানেও একই ঘটনা ঘটেছিল। অবশ্য শুধু কিংস নয়, বাংলাদেশের যেসব ক্লাব এশিয়ান ক্লাব কাপ, উইনার্স কাপ, এএফসি কাপ ও চ্যালেঞ্জ লিগ খেলেছে সবারই একই অবস্থা। ঘরোয়া ফুটবলে হিরো হলেও বাইরে জিরো বলা যায়। ঢাকা আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ জামাল ধানমন্ডি ও শেখ রাসেল এএফসি ক্লাব ফুটবলে খেলেছে। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো ফল মোহামেডানেরই। ১৯৮৮ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে এশিয়ান ক্লাব ফুটবল বাছাইপর্বে মোহামেডান খেলেছিল ইরানের পিরুজি ও শ্রীলঙ্কা সান্ডোর্স ক্লাবের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচে সান্ডোর্সের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করলেও পরের ম্যাচে পিছিয়ে থেকে ইরান চ্যাম্পিয়ন পিরুজিকে ২-১ গোলে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছিল।
ঢাকা আবাহনী ২০১৯ সালে এএফসি কাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। তবে তা ছিল দ্বিতীয় স্তরের আসর। ১৯৮৮ এশিয়ান ক্লাব কাপই ছিল এএফসির সেরা টুর্নামেন্ট। সেবার কুয়ালামপুরে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্বে কাতারের আল সাদের সঙ্গে ড্র, এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে জয় পেলেও সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া ক্লাবের কাছে হেরে এশিয়ান ক্লাব ফুটবলে সর্বোচ্চ আসরে শীর্ষে দশে থাকে মোহামেডান। পরের বছরে চূড়ান্ত পর্বে খেললেও ফল ছিল হতাশাজনক। কিংসেরও মোহনবাগান, ওড়িশা ও মালদ্বীপের বিখ্যাত ক্লাবগুলোর বিপক্ষে জয় পেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অ্যাওয়ে ম্যাচে ব্যর্থতায় পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারেনি? সত্যি বলতে কি কিংস যে মানের দল স্বাভাবিকভাবে তাদের ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা থাকে উঁচুতে। অবশ্য কয়েকটি আসরে আবার কিংস বিতর্কিত রেফারিংয়ের শিকার হয়েছে।
এশিয়ান ক্লাব ফুটবলে বড় সাফল্য না থাকলেও বাইরে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবার আগে আরামবাগের নামই উচ্চারিত হবে। ১৯৮০ সালে তারা নেপালে আনফা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। যা দেশের বাইরে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের প্রথম শিরোপা। দ্বিতীয় শিরোপা জেতে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান। ১৯৮২ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসিয়ে আশিষ-জব্বর স্মৃতি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ভারতে এয়ার ইন্ডিয়া ও বর দুলাই আসরেও শিরোপা জিতেছে তারা। আইএফএ শিল্ডে অর্জন একবার রানার্সআপ। ডুরান্ড কাপে একবার সেমিফাইনাল খেলে। আবাহনী ভারতে নাগজি ট্রফি, বর দুলাই ও চার্মস কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। ঢাকায় বিদেশি দলগুলোয় অংশ নেওয়া বিটিসি কাপ জেতাটাও ছিল কৃতিত্বের। শেখ জামাল ধানমন্ডি নেপালে পোখরা গোল্ড কাপ, ভুটানে কিংস কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। আইএফএ শিল্ডে ফাইনালে উঠলেও রানার্সআপে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। মুক্তিযোদ্ধা ভারতে ম্যাক ডোয়েল কাপে শিরোপা জিতেছিল। চট্টগ্রাম আবাহনীর চট্টগ্রামে শেখ কামাল গোল্ড কাপে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়।
ঘরে ও বাইরে ট্রফি জেতা অবশ্যই কৃতিত্বের। কিন্তু এশিয়ান ক্লাব ফুটবলে সর্বোচ্চ আসরে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর বেহালদশা কাটবে কবে? শুধু কি অংশ নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে? এ ব্যাপারে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আপনি যখন উন্নতমানের টুর্নামেন্ট খেলতে যাবেন, তখন প্রস্তুতি নিতে হবে সেই রকম। খেলবে আর সাফল্য পেয়ে যাবে তা তো নয়। এজন্য পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। তা না হলে ফল কখনো সুখকর হবে না।’