কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) বৈশ্বিক নেতৃত্ব অর্জনের লক্ষ্যে বিশাল বিনিয়োগে নেমেছে সৌদি আরব। তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে দেশটি এখন গড়ে তুলছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্ক—যার বাজেট প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার।
এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘হিউমেইন’ (Humain)—সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। ‘হিউমেইন’-এর মাধ্যমে দেশটি ডেটা সেন্টার, ক্লাউড অবকাঠামো, লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ও এআই অ্যাপ্লিকেশনের পূর্ণাঙ্গ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে।
গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়াদ সফরের আগে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। আর চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এফআইআই) সম্মেলনে হিউমেইনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক পরিসর আরও স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।
হিউমেইনের সিইও তারেক আমিন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এআই বাজারে পরিণত করা।”
তিনি জানান, সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর স্বল্পমূল্যের জ্বালানি ও শক্তিশালী বিদ্যুৎ অবকাঠামো, যা বিশাল কম্পিউটিং শক্তির চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। “আমাদের আলাদা করে বিদ্যুৎ অবকাঠামো তৈরি করতে হবে না। এর মানে, উন্নয়ন দ্রুত হবে,” বলেন আমিন।
২০৩৪ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ৬ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায় হিউমেইন। এই প্রকল্পে অংশীদার হয়েছে এনভিডিয়া, এএমডি, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, কোয়ালকম ও সিসকো-র মতো বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
গত মঙ্গলবার হিউমেইন ব্ল্যাকস্টোন-এর সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে নতুন ডেটা সেন্টার নির্মাণে। একই দিনে তারা উন্মোচন করেছে এআইচালিত অপারেটিং সিস্টেম ‘হিউমেইন ওয়ান’ (Humain One)—যেখানে ব্যবহারকারীরা ভয়েস বা টেক্সট কমান্ডের মাধ্যমে কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারবেন।
প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে মানবসম্পদ, অর্থ, আইন, পরিচালনা ও আইটি বিভাগে ব্যাপকভাবে এই এআই সিস্টেম ব্যবহার শুরু করেছে। সিইও তারেক আমিন জানান, “আমার পে–রোল বিভাগে এখন একজন মানুষ আছে, বাকিদের জায়গায় কাজ করছে এআই এজেন্টরা।”
‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি আরব এখন অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনার চেষ্টায় ব্যস্ত। তবে তেলের দামের পতন ও নিওমসহ বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের বিলম্ব দেশটিকে নতুন চাপে ফেলেছে। এই প্রেক্ষাপটে এআই-কেন্দ্রিক উদ্যোগকে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে প্রতিযোগিতায় সৌদি আরবের সামনে আছে প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি সম্প্রতি ‘স্টারগেট ইউএই’ (Stargate UAE) নামে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ডেটা সেন্টার প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি করেছে—যা ওপেনএআই, ওরাকল, এনভিডিয়া ও সিসকোর সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে তারেক আমিন বলেন, “জ্ঞান এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত না হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকাই ভালো। ইউএই যা করছে, সেটিও ভালো; আমরাও যা করছি, তা সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে।”
সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/আশিক