ভারত-পাকিস্তান স্বপ্নের ফাইনাল আগামীকাল। ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুই দল কখনো ফাইনালে মুখোমুখি হয়নি। টি-২০ বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল খেলেছে। এবারই প্রথম এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলবে দুই প্রতিবেশী। রবিবার স্বপ্নের ফাইনালে পাকিস্তানের জায়গায় বাংলাদেশ খেলত, যদি পাহাড়সমান চাপ সামলে জিততেন জাকেররা। কিন্তু পারভেজ ইমন, জাকের আলি, নুরুল হাসান সোহান, তাওহিদ হৃদয়রা পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংয়ে হেরে যান। সাবেক বিশ্ব ও এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে ১৩৫ রানে বেঁধেও বাংলাদেশ হেরেছে ১১ রানে। সুযোগ থাকার পর ফাইনাল খেলতে না পারার ব্যর্থতাকে অতসী কাচের নিচে ফেলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা কাটাছেঁড়া করেছেন টাইগারদের পারফরম্যান্স। তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম সাকিব, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদিরা পাস মার্কস পেয়ে উতরে গেছেন। ব্যাটিংয়ে সাইফ হাসান, লিটন দাস, তাওহিদ ছাড়া তানজিদ, পারভেজ, সোহান, জাকের, শামীম পাটোয়ারীরা কেউই পাস মার্কস পাননি। প্রশ্ন উঠেছে তাদের ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য নিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তাদের খেলার সামর্থ্য এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
হারা ম্যাচ জিতেছে পাকিস্তান। অবিশ্বাস্য ম্যাচ জয়ের পর ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ সোয়েব আক্তার ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশকে ম্যাচ উপহার দেওয়ায়। ভুল বলেননি পাকিস্তানি তারকা ফাস্ট বোলার। মাত্র ১৩৬ রানের টার্গেট টপকাতে না পারাটা বেদনাদায়ক। পাঁজরের ব্যথায় সুপার ফোরের শেষ দুই ম্যাচ খেলেননি লিটন। পাকিস্তানের কাছে অবিশ্বাস্য হারের পর টাইগার হেড কোচ ফিল সিমন্স দুষেছেন ব্যাটার সিদ্ধান্তহীনতাকে, ‘ব্যাটাররা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সব দলকেই কোনো না কোনো সময় এমন দিনের মুখোমুখি হতে হয়। আজ (গতকাল) আমাদের তেমন একটা দিন গেল। ব্যাটারদের সিদ্ধান্ত আর শট নির্বাচন ভালো হয়নি।’ পুরো আসরে টাইগারদের মধ্যে সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটিং করেছেন ওপেনার সাইফ হাসান। টানা দুই হাফ সেঞ্চুরিতে চার ম্যাচে সাইফ রান করেছেন ১৭৮। সর্বোচ্চ ৬৯। ১২৮.০৫ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসগুলোতে ছক্কা মেরেছেন ১২টি এবং ৮টি চার। পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটারা সব মিলিয়ে ছক্কা মেরেছেন মোট ২৭টি। ৩টি করে ছক্কা মেরেছেন শামীম ও তাওহিদ সুপার ফোরে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। নেতৃত্ব দেওয়া জাকের পুরো আসরে বল খেলেন ৬৬টি। ১০৭.৫৭ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসগুলোতে চার মেরেছেন ৫টি। অথচ টিম ম্যানেজমেন্ট পুরো আসরে ফিনিশারের পরিকল্পনা করেছিলেন জাকেরকে কেন্দ্র করে। আসরে জাকেররা চার মেরেছেন ৫৭টি। শতরানের জুটি নেই। পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব রানের জুটি চারটি। সর্বোচ্চ ৯৫ রান হংকং ম্যাচে তৃতীয় উইকেট জুটিতে। ওপেনার সাইফ দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেন। তানজিদ তামিম একটি হাফ সেঞ্চুরি করেন। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাইফ-তানজিদ ৬৩ রান করেন উদ্বোধনী জুটিতে। বোলিংয়ে মুস্তাফিজ ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট, রিশাদ ও তাসকিন ৫ ম্যাচে ৮টি করে, শেখ মেহেদি ৬ ও তানজিম সাকিব ৪ উইকেট নেন।
ব্যাটিংয়ে ওপেনাররা জুটি গড়তে না পারায় মিডল অর্ডার ও লোয়ার মিডল অর্ডারে চাপ পড়েছে ব্যাপক। লিটন শেষ দুই ম্যাচ না খেলায় ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন এসেছে বারবার। মেহেদি মূলত স্পিনার। এরপর ব্যাটার। পাকিস্তানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চার নম্বরে ব্যাটিং করানো হয়। অথচ পুরো আসরে তার রান ১০৫.২৬ স্ট্রাইকরেটে চার ম্যাচের তিন ইনিংসে ২০। এমন একজনকে চার নম্বরে ব্যাটিং করানোর ব্যাখ্যায় টাইগার কোচ বলেন, ‘আপনি এটাকে চার নম্বর হিসেবে দেখছেন। আমি দেখেছি এমন একজনকে পাঠানো হচ্ছে, যিনি তখন পেসারদের সামলাতে পারতেন। তখনো পাওয়ার প্লে চলছিল। তাই সে ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে বেশি খেলতে পারত। যদি তাকে নিচে পাঠাতাম, তাহলে শুধু স্পিনারদেরই মুখোমুখি হতো। জাকের আর শামীম স্পিনারদের ভালো খেলে। মিডল অর্ডারে তাদের নিয়ে এমনই চিন্তা-ভাবনা ছিল আমাদের।’