ফের ব্যাটিং ব্যর্থতা। ফের হার। দায়িত্ব নিয়ে কোনো ব্যাটার বড় কোনো ইনিংস খেলতে পারেননি। এই ব্যর্থতায় প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জেতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি মিরাজ বাহিনী। জিততে না পারায় ইতিহাস গড়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। ৯৯ রানে হারের কারণ ব্যাখ্যায় টাইগার অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ বলেন, ‘ম্যাচের শেষ ১০ ওভারে আমরা দারুণ বোলিং করেছি। যদিও পাল্লেকেলের ব্যাটিং উইকেটে বোলিং করা সহজ ছিল না। ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি আমরা। ভালো বাটিং করলে শেষ ১০ ওভারে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করব। কিন্তু আমরা ভুল করেছি। মিডল অর্ডার এবং ওপেনিংয়ে আমরা কোনো জুটি গড়তে পারিনি। জুটি গড়তে না পারায় সমস্যায় পড়েছি। আমাদের দল তরুণদের নিয়ে গড়া। তাদের সময় দরকার। যদি আপনি তাদের সময় দেন, তাহলে নিশ্চিত এক দিন তার প্রতিদান দেবে।’
শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ে হাতছানি ছিল পাল্লেকেলের ম্যাচটিতে। ইতিহাস গড়ার ম্যাচে টাইগাররা ব্যাটিং করেছে ২৮৬ রানের টার্গেটে। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে এত রান তাড়া করে কখনো জেতেনি বাংলাদেশ। আড়াই শ বা তার ওপরে রান টপকে ম্যাচ জেতার রেকর্ড রয়েছে মাত্র দুটি। চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার ২৫৫ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতেছিল টাইগাররা। জয়ের নায়ক ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১২২ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। গতকাল আউট হয়েছেন শূন্য রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ২৭৯ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ২০২৩ সালের নভেম্বরে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে দিল্লিতে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে।
শেষ ম্যাচে এক পরিবর্তন নিয়ে খেলে মিরাজ বাহিনী। বোলিং বিভাগকে শক্তিশালী করতে হাসান মাহমুদের জায়গায় ফেরানো হয় ডান হাতি ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদকে। কলম্বোয় প্রথম ওয়ানডেতে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন। স্বাগতিকরা খেলেছে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে। টস জিতে প্রথম ব্যাটিংয়ে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা কুশল মেন্ডিস ১১৪ বলে ১৮ চারে ১২৪ রান করেন। অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার ৫৮ রান করেন। কুশলের সেঞ্চুরটি তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়। ২০১৭ সালে ডাম্বুলায় টাইগারদের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংসটি ছিল ১০২ রানের। কিন্তু ম্যাচটি ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। সেঞ্চুরি ইনিংস খেলে মাইলফলক গড়েন। চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সব ফরম্যাটে ২ হাজার রান করেন কুশল। বাকি তিনজন- কুমার সাঙ্গাকারা (৩০৯০), ব্রেন্ডন টেলর (২৮৭৩) ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (২৪৪৯)। ১৯৮৬ সালে ওয়ানডে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর গতকালেরটি নিয়ে ৪৪৮টি ম্যাচ খেলেছে। জয় ১৬১ ও হার ২৭৮টি। ১০ ম্যাচে ফল হয়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গতকাল ৬০ নম্বর ম্যাচ খেলেছে। বাংলাদেশের জয় ১৩ ও শ্রীলঙ্কার ৪৫টি। দুটিতে ফল নেই। প্রথম ম্যাচ হেরেও সিরিজ জয়ের রেকর্ড অবশ্য রয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হেরেছিল টাইগাররা। শেষ দুটি জিতে সিরিজ জিতেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কা : ২৮৫/৭, ৫০ ওভার (নিশাঙ্কা ৩৫, কুশল মেন্ডিস ১২৪, আসালাঙ্কা ৫৮, হাসারাঙ্গা ১৮*; মিরাজ ১০-০-৪৮-২, তাসকিন ১০-০-৫১-২, তানজিম ৬-০-৪১-১, তানভির ১০-০-৬১-১, শামীম ৪-০-৩০-১)।
বাংলাদেশ : ১৮৬/১০, ৩৯.৪ ওভার (পারভেজ ২৮, তানজিদ ১৭, হৃদয় ৫১, মিরাজ ২৮, শামীম ১২, জাকের ২৭; আসিথা ৭-০-৩৩-৩, চামিরা ৮-১-৫১-৩, ওয়েললাগে ৮-০-৩৩-২, হাসারাঙ্গা ৮.৪-১-৩৫-২)
ফল : শ্রীলঙ্কা ৯৯ রানে জয়ী।
সিরিজ : শ্রীলঙ্কা ২-১ ব্যবধানে জয়ী।