হ্যান্সি ক্রোনিয়ের পর টেম্বা বাভুমা। ১৯৯৮ থেকে ২০২৫ সাল। ব্যবধান ২৭ বছর। এ সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন গ্রায়েম স্মিথ, হাশিম আমলা, এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটার। ক্রোনিয়ে ও বাভুমা ছাড়া আর কোনো ক্রিকেটার দক্ষিণ আফ্রিকার পতাকা আকাশসম উঁচুতে তুলে ধরতে পারেননি। ১৯৯৮ সালে বিশ্বমঞ্চে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ক্রোনিয়ে। এরপর গত ২৭ বছরে প্রোটিয়ারা বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ১১ বার সেমিফাইনালে হেরেছে। ২০২৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালও খেলেছে; কিন্তু শিরোপা উৎসব করতে পারেনি। অবশেষে সেই বহু আরাধ্য স্বপ্নের মুহূর্তটি বাস্তবতার মুখ দেখেছে গতকাল। বাভুমার হাত ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা অবশেষে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। লর্ডসে এক দিন হাতে রেখে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চ্যাম্পিয়ন হলো তারা।
সাদা পোশাক ও লাল বলে প্রোটিয়াদের বিশ্বজয়ের সেনাপতি টেম্বা বাভুমা জয়ের মুহূর্ত পর্যন্ত নিশ্চুপ বসে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ককে কাভার পয়েন্টে ভেরেইনা বাউন্ডারিতে জয় নিশ্চিত করতেই বাভুমা টিম প্যাভিলিয়নে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচু করে জানিয়ে দেন-তিনি ও তাঁর দল দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বচাম্পিয়ন।
২০১৯-২১ সালে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ২০২১-২৩ সালের দ্বিতীয় চক্রের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। দুবারই রানার্সআপ হয় ভারত। ২০২৩-২৫ সালের তৃতীয় চক্রে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া।
শিরোপা জয়ে বিভোর বাভুমা লর্ডসে টস জিতে ফিল্ডিং নেন। ফাইনালের প্রথম দুই দিন ছিল পুরোপুরি পেস বোলারদের। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও ১৪টি করে মোট ২৮ উইকেটের পতন হয়। কাগিসো রাবাদার সাঁড়াশি বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ২১২ রানে অলআউট হয়। অসি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১৩৮ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭৪ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় বাভুমা বাহিনী। কামিন্স বাহিনীকে ২০৭ রানে অলআউট করে। টার্গেট ২৮২ রান। তৃতীয় দিনেই প্রথমবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়ের ভিত তৈরি করে নেন ম্যাচসেরা এইডেন মার্করাম ও বাভুমা ১৪২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে। গতকাল অবশ্য দুজন খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি। স্কোরবোর্ডে ৫ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। ব্যক্তিগত ৬৬ রানে কামিন্সের বলে উইকেটের পেছনে আউট হন বাভুমা। অধিনায়কের বিদায়ের পর মার্করাম একাই দল টেনে নেন। পরবর্তীতে ট্রিস্টান স্টাবস, ডেভিড বেডিংহ্যাম ও কাইলি ভেরেইনা দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। জয় থেকে মাত্র ৬ রান দূরে শট মিড উইকেটে ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হন মার্করাম। খেলেন ১৩৬ রানের ইতিহাসখ্যাত এক ইনিংস।
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ম্যাচসেরা মার্করাম বলেন, ‘কখনো এর চেয়ে দামি রান করিনি। প্রথম ইনিংসে ডাক মেরে ফেরার পর সবকিছু কীভাবে ঠিকঠাক হলো। কিছুটা ভাগ্যও দরকার হয়। লর্ডস এমন জায়গা, যেখানে সবাই খেলতে চায়। দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক সমর্থক এসেছেন, এটা অন্যতম বিশেষ একটা দিন তাঁদের জন্যও।’ দীর্ঘ ২৭ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বমঞ্চে চ্যাম্পিয়ন করানো অধিনায়ক বাভুমা বলেন, ‘ফাইনালের গত কয়েকটি দিন ছিল আমাদের জন্য বিশেষ কিছু। আমরা এখানে এসেছিলাম কঠোর পরিশ্রম করে। কোনো সন্দেহ নেই মুহূর্তটি আমাদের জন্য, আমাদের দেশবাসীর জন্য বিশেষ কিছু।’
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস ২১২ ও দ্বিতীয় ইনিংস ২০৭
দক্ষিণ আফ্রিকা
প্রথম ইনিংস ১৩৮ ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৮২/৫, ৮৩.৪ ওভার (এইডেন মার্করাম ১৩৬, টেম্বা বাভুমা ৬৬, বেডিংহ্যাম ২১*, ভেরেইনা ৪*)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : এইডেন মার্করাম