হাজারো সাদা বক, পানকৌড়ি, শালিক, দোয়েল আর নানান প্রজাতির ছোট-বড় পাখি বাসা বেঁধেছে শিক্ষক আখতার হোসেনের বাড়িতে। বাড়িটি স্থানীয়দের কাছে এখন পরিচিত ‘পাখির বাড়ি’ হিসেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব গাছে পাখিরা ঘর বাঁধে না। যেখানে নিরাপদ মনে করে তেমন স্থানকেই তারা ঘর হিসেবে বেছে নেয়
সবুজে ঘেরা এক শান্ত গ্রাম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মুসুল্লীয়বাদ। এ গ্রামের এক প্রান্তে গাছগাছালিতে ঢাকা এক বাড়ি যেন হয়ে উঠেছে পাখিদের স্বর্গভূমি। বাড়িটির মালিক আখতার হোসেন। পেশায় একজন শিক্ষক কিন্তু প্রকৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা যেন ছাপিয়ে গেছে সবকিছু। তাঁর বাড়ির চারপাশে সারি সারি গাছ। নেই কোনো কারখানার ধোঁয়া, মোটরগাড়ির শব্দ। সকালে পাখিদের কলতানেই ভোর হয় এই বাড়িতে। আর সন্ধ্যায় নেমে আসে এক অপরূপ নীরবতা। এই শান্ত, নিস্তব্ধ পরিবেশই যেন টেনে এনেছে শত শত পাখিকে। হাজারো সাদা বক, পানকৌড়ি, শালিক, দোয়েল আর নানা প্রজাতির ছোট-বড় পাখি বছরজুড়ে এখানে বাসা বাঁধে। আশ্চর্যের বিষয়, পাখিরা এখানে শুধু আসে না, থাকেও বছরের পর বছর। যেন তারা বুঝে গেছে, মানুষের ভয়ে নয়, এখানে তারা পাবে নিরাপত্তা ও ভালোবাসা। পাখিদের এ উপস্থিতি শুধু বাড়ির সৌন্দর্যই বাড়ায়নি, আশপাশের পরিবেশকেও করেছে প্রাণবন্ত। অনেক সময় বাইরের মানুষও আসে এই পাখিবাড়ি দেখতে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পূর্ব মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেন। তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলে শত শত পাখির খুনশুটি আর কলকানে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। প্রায় ৪০ বছর ধরে পাখিরা এ বাড়িতে বসবাস করায় এলাকাবাসীর কাছে বাড়িটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পাখির বাড়ি’ হিসেবে। পরিবেশবিদরা জানান, পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ ছাড়া প্রকৃতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। পাখি থাকলে গাছ থাকবে, গাছ থাকলে ফুল ও ফল থাকবে। পাখি দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বীজকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, বীজ থেকে গাছ হচ্ছে এবং সেই গাছই আমাদের অক্সিজেনের ভান্ডার। তাদের ভাষ্যমতে, সব গাছেই পাখির ঘর হয় না। যেখানে নিরাপদ আশ্রয় রয়েছে তেমন স্থানকেই পাখিরা ঘর হিসেবে বেছে নেয়। স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক আখতার হোসেনের বাড়ির গাছে বসবাস করছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। দিন শেষে পাখিরা ঘরে ফেরে। গাছের ডালপালাই তাদের সেই ঘর। ডাক দিলে প্রায়ই পাখিরা গাছ থেকে চলে আসে হাতের নাগালে। গ্রামের বাসিন্দা সায়েম হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখছি। শিক্ষক আখতারের বাড়িতে প্রচুর পাখি বসবাস করছে। বাড়িটিতে প্রবেশ করলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আমরা সব সময় নজর রাখি যেন কেউ পাখিদের কষ্ট না দেয়।’ একই এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ইকরামুল হোসেন বলেন, ‘পাখিদের বিরক্ত করা তো দূরের কথা, তাদের নিরাপত্তার জন্য পরিবারের সব সদস্য খেয়াল রাখেন।’ শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, পাখির নিরাপদ চলাফেরার জন্য এলাকাবাসীও যথেষ্ট সচেতন। শিক্ষক আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেক সময় অনেক আহত পাখি আমাদের বাড়িতে আসে। তাদের চিকিৎসা দিই। আবার অনেক পাখির বাচ্চা খাবার খেতে পারে না। গাছ থেকে নামিয়ে সেগুলোকে নিয়মিত খাবার খাওয়াই। পরিবারের সবাই পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য সব সময় নজর রাখি। এ ছাড়া পাখিদের সঙ্গে আমার পরিবারের সবারই একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে।’ তিনি আশা করেন, পাখি সুরক্ষায় সমাজের সবাই এগিয়ে আসবেন। মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পাখির আবাসস্থল শিক্ষক আখতারের বাড়ি পরিদর্শন করে ভালো লেগেছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিদের জন্য তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’