আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি ষষ্ঠবারের মতো সরকার গঠন করবে এমনটিই আশা করা হচ্ছে। নির্বাচনে ভোটারদের হৃদয় জয়ের চাবিকাঠি বলে বিবেচিত হবে স্বাধীনতার ঘোষক ও অবিসংবাদিত রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অসামান্য জনপ্রিয়তা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে পুরো জাতি এখন জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ফসল ঘরে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিএনপি আর গণতন্ত্র সমার্থক শব্দ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ফসল। সে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভ্যুত্থানে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব হাতে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের পথে হাঁটেন তিনি। উৎপাদনমুখী রাজনীতির প্রবক্তা বীর উত্তম জিয়াউর রহমান দেশ গড়ার সংকল্পে ১৯৭৮ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ দলে তিনি পোড় খাওয়া সৎ রাজনীতিকদের স্থান যেমন নিশ্চিত করেন। তেমন ডেকে আনেন রাজনীতির বাইরের জ্ঞানীগুণীদের।
আগামী ছয় মাসের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্রীয়ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এটি দলমতনির্বিশেষে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অভিমত। আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপি যে বিপুলভাবে জয়ী হবে তা নিয়ে কোনো সংশয়ের সুযোগ নেই। ২০০৭ সাল থেকে মার খেতে খেতে ভয়ানক দুর্দশায় পতিত বিএনপির নবজন্ম হতে যাচ্ছে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে। রচিত হবে নতুন ইতিহাস। ১৮ কোটি মানুষের স্বদেশ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রা বিশ্বজুড়েও অভিনন্দিত হবে। কারণ বাংলাদেশ এখন বিশ্ব রাজনীতিতে প্রথম সারির তিরিশের মধ্যে চলে এসেছে। অচিরেই তা আরও বড় অবস্থান দখল করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বিএনপি আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়। সর্বস্তরের মানুষ সমবেত হয় বিএনপি নামের ছাতার নিচে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন আপাদমস্তক একজন সৈনিক। দেশপ্রেমের বিচারে উত্তীর্ণ একজন বীর সেনানি। মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম। জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেছিলেন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে। ডান-বাম কোনো দিকে ঝুঁকে পড়ার ভ্রান্তিতে তিনি ভোগেননি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পতাকার তলে তিনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠী বাঙালির পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদেরও একাত্ম করতে চেয়েছিলেন। মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সব মানুষকে তিনি নিয়ে এসেছিলেন এককাতারে। বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ বাঙালি। কিন্তু তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে পথচলার পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। যাতে দেশের কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর মধ্যে হীনম্মন্যতা দেখা না দেয় সে ব্যাপারে এ মহান রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন সচেতন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পুরো বাংলাদেশের মানুষকে তিনি এক সূত্রে গাঁথতে চেয়েছিলেন। বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাকে তিনি কর্তব্য বলে ভেবেছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ। এ দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জকে তিনি দায়িত্ব হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর দুই শতাধিক দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে ৩৩তম স্থানে। দেশের এ অগ্রযাত্রার শুরু জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। দূরদর্শী এই রাষ্ট্রনায়ক দেশের উন্নয়নের জন্য একদলীয় শাসনের বদলে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পথে পথচলাকে যথার্থ মনে করেছিলেন। অর্থনীতিকেও তিনি তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক গণ্ডি থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। গণতান্ত্রিক ও উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করেন।
ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় চীনের সঙ্গে গভীর আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলেন জিয়াউর রহমান। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা ছিল তাঁর কৃতিত্ব। দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর জোট সার্ক গঠনের উদ্যোগ নেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। উদ্দেশ্য ছিল এ জোটের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করা। সার্কের সুবাদেই দক্ষিণ এশিয়ায় অন্তত ৫০ বছর সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এমন একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা যে দল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিএনপি গঠনের পর গত ৪৭ বছরে দেশের যে উন্নতি হয়েছে তার মূল কৃতিত্ব এই দলটির। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময় বাংলাদেশ বাজার অর্থনীতির পথে যাত্রা শুরু করে। এ বিষয়ে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমর্থন নিশ্চিত করার কৃতিত্ব দেখায় বিএনপি সরকার। যে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি পাল্টে দেয়। দেশে ব্যবসাবাণিজ্যের মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে উন্নয়নের গতিশীল পথে। আজ দেশজুড়ে যে হাজার হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার কৃতিত্ব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের। বাজার অর্থনীতিকে গাইডলাইন হিসেবে নেওয়ার বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশনেত্রী। যে সিদ্ধান্ত কৃষিনির্ভর বাংলাদেশকে শিল্পনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পথ রচনা করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ পৌনে ১৬ বছরের স্বেচ্ছাচারী ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটেছে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮ কোটি মানুষের সমর্থন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের আমলে দেশের ব্যবসাবাণিজ্য উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছে। শত শত শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। কর্মহীন হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। দেশের অর্থনীতির ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে।
ছয় মাস পর যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার দিকে চেয়ে আছে দেশের মানুষ। এ নির্বাচনে বিএনপি জিতলে দেশকে এগিয়ে নিতে ব্যবসাবাণিজ্য খাতকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হবে- এ বিশ্বাস সর্বস্তরের মানুষের। এ খাতের সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পথ ধরে দেশের আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
বাংলাদেশে আর যাতে কর্তৃত্ববাদ ও ফ্যাসিবাদ কখনো মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে তা নিশ্চিত করা হবে। বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এ লক্ষ্য পূরণের পথে বারবার গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির বাধা এসেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে জীবন দিতে হয়েছে অশুভশক্তির ষড়যন্ত্রে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে কারা নির্যাতন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন দেশ-জাতি ও দলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কারণে।
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের পতন হলেও দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য ভ্রুকুটি দেখাচ্ছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। মৌলবাদীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে বাইরের দুনিয়ায় ভুল বার্তা দিচ্ছে তাদের অসহিষ্ণু কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। এ অপশক্তি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে।
লেখক : বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ