পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের ৩৬ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফর অশ্বডিম্বই শুধু প্রসব করেছে। হাই প্রোফাইলের এই সফর দুই দেশের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝির অবসান ঘটাবে বলে যারা আশা করেছিলেন, তারা এখন হতাশ। ব্যক্তিগতভাবে আমি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও নিবিড় সম্পর্কের পক্ষে। এই এলাকার আটটি দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ হলে লাভবান হবে সবাই। ২০৫ কোটি মানুষের স্বার্থও তাতে রক্ষিত হবে। ইউসুফ দার উপপ্রধানমন্ত্রী শুধু নন, পাকিস্তান সরকারের দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ইসলামাবাদে বর্তমানে যে জোট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তার গডফাদার ভাবা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তাঁর ছোট ভাই। শরিফ পরিবার পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার। যাঁর সঙ্গে রয়েছে দার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। নিজেদের পাঞ্জাবি বলে দাবি করলেও শরিফ ও দার পরিবারের শিকড় কাশ্মীরে। ইসহাক দার সম্পর্কে নওয়াজ শরিফের বেয়াই। শরিফকন্যা আসমা নওয়াজকে বিয়ে করেছেন ইসহাক দারের পুত্র আলি দার।
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় শরিক মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরকালে তিনি একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবেন এমনটিই আশা করা হচ্ছিল। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আশা করা হয়েছিল একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর গণহত্যার জন্য ইসহাক দার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে দুই দেশের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পথ রচনা করবেন। দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি নিরসনে যা অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ইসহাক দার সেটি পাশ কাটিয়ে গেছেন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে। বলেছেন, ১৯৭৪ সালে দিল্লিতে সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও ২০০২ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বাংলাদেশ সফরকালে দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে।
পারভেজ মোশাররফ ২০০২ সালে বাংলাদেশ সফরকালে একাত্তরের গণহত্যা সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করলেও সেটা আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের হত্যাকাণ্ড, দুই থেকে তিন লাখ নারী ধর্ষণ এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত ছিল পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা। এসব জঘন্য অপরাধের সঙ্গে পাকিস্তানের জনগণ জড়িত নয়। জড়িত পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। পাকিস্তানের জনগণের ওপরও যারা নিপীড়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস হলো বারবার জনগণের ওপর অবৈধভাবে চড়াও হওয়ার ইতিহাস। একাত্তরের গণহত্যায় যেহেতু পাকিস্তানের জনগণ বা তাদের দ্বারা নির্বাচিত কোনো সরকার জড়িত নয়, সেহেতু ইসহাক দার তাঁর দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইলে তা পাকিস্তানের জনগণ বা সরকারের জন্য লজ্জা বয়ে আনত না। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অবৈধ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তা একটি জোরালো প্রতিবাদ বলে বিবেচিত হতো। মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের মহাক্ষমতাধর সামরিক বাহিনী একাত্তরের গণহত্যার জন্য সে দেশের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাক তা চায়নি। কারণ তাতে পাকিস্তানি জনগণের কাছে একাত্তরে বাংলাদেশে দখলদার সেনাবাহিনীর জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিষয়টি স্পষ্ট হতো। পাকিস্তানের শাসনক্ষমতায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে অবদান রাখত।
ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতিকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ইসলামাবাদ থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা দ্য ক্যাচলাইন ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ ফিরে পাওয়ার দিবাস্বপ্নের কথা প্রকাশ করে। পত্রিকাটির একজন কলাম লেখকের ধৃষ্টতাপূর্ণ কলামে বলা হয়, ৫৪ বছর পর হিসাবনিকাশের সময় এসেছে। পূর্ব পাকিস্তানকে ফিরে আসতে হবে বলে ওই কলাম লেখক বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা প্রকাশ করেন। দ্য ক্যাচলাইনে তাবাসসুম মোয়াজ্জাম খানের কলামে বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে ফিরে পাওয়ার দিবাস্বপ্নের কথা প্রকাশ করা হয়েছে বেপরোয়াভাবে। নিবন্ধটি এমন সময় প্রকাশিত হয়, যখন ঢাকা- ইসলামাবাদ সম্পর্কে উষ্ণতা আনার চেষ্টা চলছে। একের পর এক পাকিস্তানি কর্মকর্তা ঢাকা সফরে আসছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দেড় যুগের শীতল সম্পর্ককে উষ্ণতায় রূপান্তর করতে। তাবাসসুমের কলামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক কতটা এগোবে সে সংশয়ও দানা বেঁধে উঠেছে।
দ্য ক্যাচলাইনের উর্বর আবিষ্কার, ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর উপদেষ্টারা মুক্তিবাহিনী নামধারী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অশোভনভাবে হস্তক্ষেপ করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপ এবং প্রচারণার মাধ্যমে তারা পাকিস্তানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছিল। সেই অংশ পাকিস্তানবিদ্বেষী বাঙালি হিন্দু এবং তাদের মুসলিম সহযোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানি শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের অনিবার্য পরিণতি। পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বারবার বাংলাদেশের মানুষ লড়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়ে তারা যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে ব্রিটিশ শাসকরাও তেমন নজির রাখেনি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে বাঙালিরা স্বাধিকারের জন্য উন্মুখ। ১৯৭০ সালে মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালি জাতি। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়। ৩০০ আসনবিশিষ্ট পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পায় ১৬০ আসন। বাংলাদেশের ১৬২টি আসনের ২টি বাদে সব আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। বাঙালিরা একটি সত্তা হিসেবে রুখে দাঁড়ায় পাকিস্তানের শাসক শ্রেণির অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরে অস্বীকৃতি জানায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় কৃষক শ্রমিক ছাত্রসহ সর্বস্তরের মানুষ। তারা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়। কিন্তু পাকিস্তানি পত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়নের অপকর্ম করা হয়েছে নির্লজ্জভাবে। তাবাসসুম শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশদ্রোহী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ৫৪ বছর ধরে যখনই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর ভারত তাদের তথাকথিত ‘বিজয়’ উদ্যাপন করেছে, তখনই দেশপ্রেমিক পাকিস্তানিরা প্রচণ্ড যন্ত্রণা ও অপমান সহ্য করেছে। পাকিস্তানি লেখিকার ভাষ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরের কুখ্যাত ছবি প্রচারিত হয়। ওই আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত করা হয়। দেশদ্রোহী শেখ মুজিবুর রহমানকে শাসনক্ষমতায় বসানো হয়। যিনি ভারতীয় প্রভুদের নির্দেশে মুসলিম এবং দেশপ্রেমিক পাকিস্তানিদের এক পাশে রেখে হিন্দু আধিপত্যের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন ওই এলাকাকে। তাবাসসুম তাঁর লেখায় মুজিবের হত্যাকারীদের দেশপ্রেমিক হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন বিকৃত মস্তিষ্কের প্রতিফলন ঘটিয়ে।
দ্য ক্যাচলাইনে বলা হয়েছে, দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তার হাতে মুজিব হত্যার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান সরকারপ্রধান হিসেবে আবির্ভূত হন। যিনি ছিলেন দ্বিতীয় কাশ্মীর যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সম্মানিত কমান্ডার। যাকে হিলাল-ই-জুরাত পদকে ভূষিত করা হয়। জিয়াউর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক সম্পর্ক স্থাপন এবং ভারতের বিভাজনমূলক প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে দুঃখজনকভাবে হত্যা করা হয়। ক্ষমতায় আসেন জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি তাঁর শাসনামলে ভারত-সমর্থিত হিন্দু বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করেন। তবে ভারত তার রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল করার জন্য তাঁকে হানিট্র্যাপের ফাঁদে ফেলেছিল। তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হতো। তারপরও এরশাদ পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য দেখাতেন। এর উদাহরণ পাকিস্তানের নায়ক এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের পুত্র আবদুল্লা হিল আমান আজমির ক্ষেত্রে তাঁর হস্তক্ষেপ।
আজমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি পাকিস্তানবিরোধী লোকজন এবং বাঙালি হিন্দুদের বিরোধিতার সম্মুখীন হন। তারা আজমির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রশ্ন তোলার কারণ আজমি এবং তাঁর বাবা গোলাম আযম তখনো ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক। বিরোধিতা যখন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন অধ্যাপক গোলাম আযম এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরশাদ সমস্যাটি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করেন। পাকিস্তানি পত্রিকার ভাষ্য, ব্রিগেডিয়ার আমান আজমি তাঁর বাবার মতো একজন কট্টর দেশপ্রেমিক। তিনি একাধিকবার প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে তিনি বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় সংগীত বা পতাকাকে স্বীকৃতি দেন না, বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ প্রত্যাখ্যান করেন। পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণারও নিন্দা করেছেন তিনি।
আজমি ১৯৮১ সাল থেকে নীরবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেছেন। ভারতীয় প্রভাব থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ২০০৯ সালের ২৪ জুন মুজিবকন্যা এবং ভারতের অনুচর শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিগেডিয়ার আজমিকে সামরিক বাহিনীর চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। শেখ হাসিনার শাসনামলে গোলাম আযম পরিবার বছরের পর বছর নির্যাতন সহ্য করে। শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেন। পাকিস্তানি লেখিকার দাবি, ঘটনায় নাটকীয় মোড় আসে যখন জামায়াতে ইসলামী, নোবেজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং মুসলিমদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভের ফলে হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ভারত তাঁকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়।
পাকিস্তানি পত্রিকায় বলা হয়, ভারতীয় আধিপত্যের কবল থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূস পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন শুরু করেন। ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী থেকে ব্রিগেডিয়ার আজমির বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তাঁকে অবসর দেওয়া হয় পূর্ণ সুযোগসুবিধাসহ। তবে আজমির জন্য এটিকে ন্যায়বিচার বলে অভিহিত করা যাবে না। তাঁর মতো একজন সুযোগ্য ব্যক্তি জেনারেল পদে পদোন্নতি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য। ড. ইউনূসের উচিত যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে আজমিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা উভয় পদেই নিয়োগ করা যেতে পারে। যেখানে তাঁর কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ ঘটাবে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সার্কভুক্ত দেশ। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে লাভবান হতে পারে দুই দেশ। এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে আছে একাত্তরে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর গণহত্যার ঘটনা। পাকিস্তান সে অপকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলে সভ্য জাতি হিসেবে তারা যে নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলতে আগ্রহী, তা প্রমাণিত হতো। একাত্তরের গণহত্যার জন্য কোনোভাবেই পাকিস্তানের জনগণ দায়ী নয়, দায়ী সামরিক জান্তা। তারা পাকিস্তানের জনগণের ওপরও চেপে বসেছিল নিপীড়ক হিসেবে। কিন্তু পাকিস্তানি উপপ্রধানমন্ত্রী সেটিকে যেভাবে পাশ কাটিয়ে গেছেন, তা শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয় দুর্ভাগ্যজনকও। আরও দুর্ভাগ্যজনক পাকিস্তানি পত্রিকার বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা। যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণাই শুধু নিশ্চিত করবে।
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইমেইল : [email protected]