মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, নতুন বাংলাদেশে স্কুল ছাত্রীরা যেন ইভটিজিংয়ের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার নিরাপত্তার বিষয়টা সবার আগে। সেটা ভিতরে বা বাহিরে হোক।
শনিবার দুপুরে পুরান ঢাকার ঢাকা সেন্ট্রাল গালর্স হাই স্কুলে আয়োজিত নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় উপদেষ্টা বলেন, ‘মেয়েদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব দিতে হবে। স্কুলে যাবার পথে ছাত্রীরা যেন ইভটিজিংয়ের শিকার না হয় আমাদের নতুন বাংলাদেশে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের মেয়েদের স্বাধীনভাবে সমাজে চলাফেরার পথ সুগম করতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, পরিবেশের বিষয়ে সচেতন হতে হবে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা যদি একদিন সপ্তাহে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করে সেটাও শিক্ষার অংশ হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রত্যয়ী ও ব্যক্তিত্ববান হয়ে নারী নির্যাতন আইন সম্পর্কে জানতে হবে। বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতা হতে হবে আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের। আমি চাই, ‘স্কুলের মেয়েরা কলেজে যাবে, বিশ্ববিদ্যালয় যাবে, সরকার চালাবে। উপদেষ্টা বা মন্ত্রী না শুধু জাতীয়কে নেতৃত্বে দিতে হবে।’
ফরিদা আখতার বলেন, শিশুরা যখন জাতীয় সংগীত গায় তখন সবাইকে গাইতে হবে। জাতীয় সংগীত শুধু শোনার বিষয় না এটা সকলের গাওয়ার বিষয়। আমরা সেটা পরিবর্তন করব। এ সরকার গঠিত হয়েছে একটা গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে। অনেক ছেলে-মেয়েরা হাত, পা, চোখ হারিয়েছে। যারা আহত হয়েছে তাদের কষ্ট স্মরণ করলে আমার মনে হয় আগামী বাংলাদেশ কোনোভাবে খারাপ হবে এটা কেউ চাই না।
ফরিদা আখতার আরও বলেন, এ স্কুলটা একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত স্কুলে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রথমে পাঁচজন। ওই সময় মেয়েদের স্কুলে যাওয়া অনেক কঠিন ছিল। তোমরা সেই বাধা পেরিয়ে এসেছো। শুধুমাত্র বই পড়লে হবে না সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে। এখন তো বই এবং ইতিহাস পরিবর্তন হয়। তোমরা স্কুল শিক্ষকদের সাথে কথা বলে সঠিকটা শিখবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দেশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করে। একজন মানুষ দৈনিক ২০০ গ্রাম গড়ে মাংস খায়। আবার অনেকে আছে সপ্তাহে, মাসেও একবার খায় না। কাজে আমাদের মাংস উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাছের দিক থেকে আমরা একটু ভালো অবস্থানে আছি। মাছ একটু কম দামে বাজারে পাওয়া যায়। ডিম উৎপাদন বাড়াতে হবে আমাদের। দিনে এখন ৬ কোটি ডিম উৎপাদন হয় কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। একজন মানুষ বছরে ১৩৬টা ডিম খায় কিন্তু সু-স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি খাওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, লেখাপড়া করতে হলে আমাদের পুষ্টির ছেলে-মেয়েদের দিকে নজর দিতে হবে। পড়ালেখার জন্য পুষ্টিকর খাবার অনেক বেশি প্রয়োজন। পরিবারের প্রতি আহ্বান এটা কষ্টকর হলেও নিশ্চিত করতে হবে। ছেলে-মেয়ে উভয়কে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে আমাদের মেয়েরা যেন পরিবারের খাবারে বৈষম্যের শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ বলেন, শিক্ষা এমন এক আলো যা অন্ধকারকে আলোকিত করে তুলে। আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে দেশের কল্যাণের জন্য। আগামীতে এখান থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা সেন্ট্রাল গালর্স হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক কানিজ আফসানার সঞ্চালনায় ও বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ওয়ারেছ আনসার (শিক্ষা ও আইসিটি), ঢাকা মেট্রো সার্কেল ও অতিরিক্ত দায়িত্ব ঢাকা সার্কেলের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মেনহাজুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুস্তাফিজুর রহমান, বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক নুরজাহান বেগম।
এ সময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, নবনির্মিত ছয়তলা একাডেমিক ভবন ও স্কুলের ডিজিটাল ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ দিনব্যাপী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলের সাবেক-বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত