কবে হবে জাতীয় নির্বাচন?—এই প্রশ্ন এখন সবার। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকেই সোচ্চার। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। দেশের এসব রাজনৈতিক ও সমসাময়িক বিষয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মতামত জানিয়েছেন টিভি উপস্থাপক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান।
সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমন এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে, যেখানে ক্যালেন্ডারের পাতাই যেন ভবিষ্যতের দিশা বলে দিচ্ছে। কেউ বলছে ডিসেম্বরে ভোট হবে। কেউ বলছে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। আর কেউ আবার বলছে এই ভোটের হিসাবই হবে না।
ডেট যাবে অন্য খাতে। কিন্তু প্রশ্নটা খুব সরল। যদি ভোট না হয় ডিসেম্বরে কিংবা ফেব্রুয়ারিতে তাহলে কী হবে? দেশের ভেতরে আশপাশে এবং বাইরের বিষয়ে এর কী প্রভাব পড়বে? এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার আগে একটু পেছনে থাকুন দরকার। জুলাই ২০২৪ এ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। দেশের মানুষ আশা করেছিল এবার একটা পরিবর্তন হবে। নতুন পথ চলা শুরু হবে। ভোটাধিকার ফিরবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে কিন্তু ১০ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে এখনো নির্বাচনের তারিখ নেই। নেই কোনো পরিষ্কার রোডম্যাপ। শুধু আভাস-ইঙ্গিত-বক্তৃতা আর বিদেশ সফর। সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ধরে নেওয়া যাক, ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হলো না, তাহলে? দেশের ভেতরের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভোট চায়। কারণ এটা শুধু সাংবিধানিক অধিকার নয়, এটা তাদের নিজেকে একজন নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যম।
যদি ডিসেম্বরেও ভোট না হয়, তবে মানুষের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হবে, তা সহজে কাটবে না। অনেকে অবশ্য ফেব্রুয়ারি নিয়ে খুব আশাবাদী। আমি বারবারই বলবার চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট না হলে ফেব্রুয়ারিতেও ভোট হবে না। এপ্রিল তো পরের কথা জুনেও ভোট হবে না। এবং ২৬/২৭ এ গিয়েও ভোট হয় কিনা, এটি নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে যদি ভোট না হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে কিন্তু হতাশাটা কাটবে না। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, যারা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল, যারা ভেবেছিল এবার তাদের কন্ঠস্বর গণতন্ত্রের পথে প্রতিফলিত হবে। তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হতাশা থেকে বিরক্তি আর বিরক্তি থেকে ক্ষোভ—এই চক্র শুরু হয়ে যেতে পারে।
এই টিভি উপস্থাপক বলেন, ‘বিভিন্ন দল এবং গোষ্ঠী যারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহনশীল অবস্থানে ছিল, তারা ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এটা তো সেই আগের মতোই হচ্ছে। এই বোধটা যখন ছড়িয়ে পড়বে, তখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যে জনসমর্থন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যেই অনেকে অভিযোগ করছে, সংস্কারের নামে কিছুই হচ্ছে না। উপরন্তু যদি রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে পারে যে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ভোট পিছিয়ে দিতে চায়, তাহলে তারা আবারও রাজপথে নামবে। আর একবার যদি রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হয় তা আর থামানো সহজ হবে না। আবার যারা নির্বাচনের অপেক্ষায় নিজেদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্থান গুছিয়ে নিচ্ছিল তারাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে বিএনপি, যারা গণঅভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, তাদের নেতৃত্বে হতাশা দেখা দিতে পারে।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ