গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চার ধরনের পরিণতির তথ্য পাওয়া গেছে। কেউ খুন হয়েছেন, কাউকে নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, কেউ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পৌঁছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন, আবার কেউ কেউ কোনো মামলা ছাড়াই ছাড়া পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে গুম কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আমরা তুলে ধরেছি, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে তাদের অবস্থানে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনী তুলে ধরেছেন। গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা কিছু আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনেছেন, যা মিডিয়ার মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে।
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারি করা গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি গঠনের পর বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণের জন্য কাজ শুরু করে গত বছরের ২৬ শে সেপ্টেম্বর কথিত ‘আয়না ঘর’ নামের বন্দিশালার স্থান-স্থাপনা পরিদর্শন করা হয় এবং ওই তারিখেই অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত উপরোল্লিখিত স্থান-স্থাপনার কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন বা বিয়োজন না ঘটানোর জন্য পত্র প্রদান করা হয়। এখন পর্যন্ত শুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য সারাদেশে মোট ১৬টি গোপন বন্দীশালা পরিদর্শন করা হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তথ্য প্রাপ্তির পরপরই তাৎক্ষণিকভাবেও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট-ধারা ১০ এ (১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত গুম সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর মধ্য থেকে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২৫ মার্চ ৩টি পত্রমূলে মোট ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক এফআইআর বা জিডি রেকর্ডের পর ভুক্তভোগীদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশের আইজিপি বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই